ঢাকাবুধবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি ও সমমনা ৩২ দলের গণমিছিল আজ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যুগপৎ কর্মসূচির শুরুতেই সমমনা ৩২টি রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। ছয়টি স্থান থেকে গণমিছিলের মাধ্যমে রাজধানীতে যুগপৎ কর্মসূচির সূচনা হবে আজ। তিনটি জোটভুক্ত ৩০টি দল এবং পৃথকভাবে তিনটি দল গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করবে।

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে নগরীর বিভিন্ন রাজপথ প্রদক্ষিণ করবে দলগুলো।

 

জোট ও দলগুলোর মিছিলের স্থান ও রুট নির্ধারণ হলেও গতকাল রাত পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর স্থান নির্দিষ্ট হয়নি। মিছিলের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনারের (ডিএমপি) কাছে লিখিত আবেদন করলেও অনুমতি পায়নি দলটি। তবে যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি গণমিছিলের আয়োজন করবে। বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক না করলেও যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত।

 

বিএনপিসহ বিভিন্ন জোট ও দলের পক্ষ থেকে গণমিছিল-পরবর্তী অভিন্ন যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচি নির্ধারণে গত দু’দিন জোট ও দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে তাদের মতামত নিয়েছে বিএনপি। সবার মতামতের ভিত্তিতে গতকাল দুপুরে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আগামী ১১ জানুয়ারি ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।

 

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অভিন্ন রূপরেখা ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের অভিন্ন দফা ঘোষণা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে ওই দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন থাকায় পরিবর্তন করে কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ২৪ ডিসেম্বর রংপুরের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। আজ ঢাকা ও রংপুর মহানগরে যুগপৎ গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত নির্বাচন’ দাবি করে একই দিন এ দিবসটিও পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের দাবি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের দিন রাতে করা হয়েছে।

 

আজ শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হবেন। সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য পর্ব শেষ করে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা ঘুরে নয়াপল্টনে এসে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গণমিছিলের সমন্বয়কারী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

 

বিএনপির ঘোষিত এ কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করা সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে জিরো পয়েন্টের জিপিও ঘুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দিয়ে আবারও পল্টনে এসে শেষ করবে। ১২ দলীয় জোটের মিছিল বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের কাছ থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসবে এবং পুরানা পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে। দুপুর ২টার পরে এ মিছিল শুরু হবে। ১১ দলীয় ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড় ঘুরে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ করবে। কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) বিকেল ৩টায় কারওয়ান বাজার এফডিসি গেট থেকে গণমিছিল শুরু করে মগবাজার হয়ে মালিবাগ এলাকায় শেষ করবে।

 

মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ না করায় এদিনের কর্মসূচিতে তাঁরা সরাসরি উপস্থিত না থেকে এক বিবৃতিতে গণমিছিল কর্মসূচিকে শুধু সমর্থন জানিয়েছেন। গণফোরাম নেতারা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু তিনি না থাকায় বিএনপির নেতারা তাঁদের সঙ্গে কর্মসূচির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তাই তাঁরা এবারের কর্মসূচিতে শুধু সমর্থন জানিয়েছেন। তবে গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। আগামী ২ জানুয়ারি তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হবে।

 

বিএনপির মিছিলে নেতাদের অবস্থান :গণমিছিলে বিএনপির নেতারা কে কোথায় থাকবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দুপুর আড়াইটার মধ্যে স্ব-স্ব স্থানে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 

গণমিছিলের মূল ট্রাকে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

 

সার্বিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বেনজীর আহমেদ টিটো, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নবী উল্লাহ নবী, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিব।

 

জামায়াতের মিছিল :ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের পক্ষ থেকে গত ২৫ ডিসেম্বর গণমিছিলের অনুমতির জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনার কার্যালয়ে সরাসরি গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন আইনজীবী জামায়াতের পক্ষ থেকে অনুমোদন চেয়েছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, ১০ দফার প?ক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে গণমিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। গণমিছিল শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে বাস্তবায়ন করতে ডিএমপির অনুমতি ও সার্বিক সহযোগিতা চায় জামায়াত। শেষ পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। তবে জামায়াত তাদের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজধানীতে মিছিল করবে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের স্থান নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

 

কালো দিবস পালন করবে বিভিন্ন দল :২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী সমাবেশ-বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে ‘কালো দিবস’ পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ উপলক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জোটটি। এদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের দিনকে কলঙ্ক দিবস হিসেবে পালন করবে বাংলাদেশ জাসদ। দলটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।