দিনের লম্বা একটা সময় পর্যন্ত এমনও সম্ভাবনা ছিল, ম্যাচ না শেষ হয়ে যায় আজই! সেই সম্ভাব্য শেষ যে প্রথম সেশনেই ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না, তা আলাদা করে বলার দরকার নেই। সেই বাংলাদেশের সামনেই দিন শেষে ভারতকে হারানোর অভাবনীয় এক সম্ভাবনা।
সেটির জন্য অবশ্য এখনো প্রয়োজন ৬টি উইকেট, অন্যদিকে ভারতের দরকার ১০০ রান। ১৪৫ রানের লক্ষ্যে সাকিব আল হাসানের পর মেহেদী হাসান মিরাজের তোপে ভারত হারিয়ে ফেলেছে ৪ উইকেট, তুলেছে ৪৫ রান। কৌশলগত কারণে চারে আসা অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে অপরাজিত আছেন নাইটওয়াচম্যান জয়দেব উনাদকাট।
শেষ সেশনে রান তাড়া করতে নামা ভারত ইনিংসের প্রথম ওভারে দুবার সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সাকিব। প্রথম বলেই গিলের বিপক্ষে এলবিডব্লুর জন্য নেওয়া রিভিউ অবশ্য সফল হয়নি, শেষ বলে আবার শর্ট লেগে মুমিনুল নিতে পারেননি রাহুলের ক্যাচ। তবে পরের ওভারে এসেই উল্লাসে মাতেন সাকিব। তাঁর বেরিয়ে যাওয়া বলে আউটসাইড-এজড হন ভারত অধিনায়ক রাহুল, উইকেটের পেছনে নুরুল নেন ভালো ক্যাচ।
অষ্টম ওভারে দুই ডানহাতির সামনে এসেই সফল হন মিরাজ। সামনে এসে খেলার চেষ্টা করা পূজারার ব্যাটের কানায় লেগে বলটি বাউন্স করেছিল নুরুলের গ্লাভসে যাওয়ার আগে। স্টাম্প ভেঙেও ঠিক উৎসাহী ছিলেন না নুরুল, তবে পূজারা ছিলেন ক্রিজের বাইরেই।
ভারত এরপর পাঠায় অক্ষর প্যাটেলকে। অন্যপ্রান্তে শুবমান গিল অবশ্য নড়বড়েই ছিলেন। মিরাজকে সামনে এসে খেলতে চেয়েছিলেন বল টার্ন করবে ভেবে, তবে সেটি ধরে রাখে লাইন। স্টাম্প ভাঙতে এবারও ভুল হয়নি নুরুলের। কোহলি এরপর রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তাইজুলের বলে এলবিডব্লু হওয়া থেকে।
কোহলির মনযোগ ছিল উইকেট বাঁচানোর দিকেই। তাইজুল লেংথ কমিয়ে তাঁকে সামনে এনে খেলানোর চেষ্টা করছিলেন, এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত পেয়েও গিয়েছিলেন। সে দফা রিভিউ নিইয়ে বাঁচেন কোহলি। তবে মিরাজের বলে পা অনেকটা বের করে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডে শর্ট লেগে ক্যাচ তোলেন, মুমিনুল নেন দারুণ ক্যাচ।
আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের উদ্যাপনের এক পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন কোহলি, এরপর সাকিবের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায় তাঁকে। দিনের বাকি অংশ অক্ষর ও উনাদকাট নিরাপদেই কাটিয়েছেন, তবে বাংলাদেশ দল মাঠ ছেড়েছে দুর্দান্ত এক আশা নিয়েই।
অথচ দিনের প্রথম সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে সেই দলটিই ছিল নিদারুণ চাপে। অশ্বিনকে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হন ওপেনার নাজমুল, রিভিউ নিলেও কাজে আসেনি সেটি। এর আগে-পরে তাঁর ও জাকিরের বিপক্ষে দুটি রিভিউ হারায় ভারত। প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করা মুমিনুল সিরাজকে একটি চার মারার ঠিক পরের বলেই আউটসাইড-এজ হয়ে ক্যাচ দেন উইকেটকিপারের হাতে।
উমেশকে দারুণ একটি কাভার ড্রাইভে চার মারলেও অফ স্টাম্পের বাইরে নড়বড়ে ছিলেন অতি-উৎসাহী সাকিব। সেটিই কাল হয় তাঁর, উনাদকাটের ক্রিজে পড়ার পর থেমে যাওয়া বলে শরীর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে জোরের ওপর পুশ করতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে। গতকাল ও আজ মিলিয়ে এক দিক থেকে টানা ১৪ ওভার করা অশ্বিনের জায়গায় আসা অক্ষরকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন মুশফিক। এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত তিনিও রিভিউ করেন, ব্যর্থ হয় সেটিও।
আরেক ওপেনার জাকির অবশ্য অপরাজিত থেকেই যান মধ্যাহ্নবিরতিতে। বিরতির পর ফিফটিতে যান উমেশের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে নেওয়া তিন রানে। জাকির ইনিংসে ঠিক দৃঢ় ছিলেন, বলা যাবে না তা। ড্রাইভ যেমন ভালো করেছেন, তেমনি কয়েকটি শট ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণও। চট্টগ্রামে চতুর্থ ইনিংসে বেশ লম্বা ইনিংস খেললেও আজ ফিফটির পরপরই ফিরে যান এ বাঁহাতি। উমেশের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে স্ল্যাশ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ থার্ডম্যানে। মিরাজ বেশ শর্ট লেংথের বলে অক্ষরকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু এরপর।
লিটন ও নুরুলের জুটি এরপর হয়ে থেকেছে ‘মরো নাহয় মারো’-এর মতো। ৪৪তম ওভারে অক্ষরের বলে স্লিপে দুবার ক্যাচ তোলেন লিটন, তবে নাগাল পাননি কোহলি, দুবারই হয় চার। ২৭ রানে দাঁড়িয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার পর সে ওভারেই স্লিপে ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান।
প্রথমবার পন্ত মিস করেন, পরেরবার বল পরে কোহলির হাতের আগেই। তবে অক্ষরকে সামনে ঝুঁকে খেলার চেষ্টায় ভারসাম্য হারিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফিরতে হয় ৩১ রান করা নুরুলকে। পরে স্লিপে লিটনের ক্যাচ ফেলেন কোহলি, সে শটেই ফিফটিও পান লিটন। এর আগে রিভিউ নিয়েও বাঁচেন।
চা-বিরতির পর লিটনের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক ফিল্ডিংয়ে যায় ভারত। লিটন অবশ্য গ্যাপ বের করেন ঠিকই, অক্ষরকে কাট করে মারেন চার। তাসকিনের সঙ্গে তাঁর জুটি ফিফটিও পেরোয় কিছুক্ষণ পর। তবে তাঁকে থামতে হয় সিরাজের লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা দারুণ এক বলে। ভড়কে যাওয়া লিটন বলের লাইনে ব্যাটই নিয়ে যেতে পারেননি শেষ পর্যন্ত।
ভারতের বিপক্ষে টেস্টে নিজের প্রথম ফিফটি ৭৩ রান পর্যন্ত টানতে পারেন তিনি। তাসকিনের সঙ্গে তাঁর ৬০ রানের জুটি ভারতের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাইজুল এরপর অশ্বিনের বলে এলবিডব্লু, খালেদ হন রানআউট। তাসকিন অপরাজিত থাকেন ৩১ রানে।