ঢাকাশনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার ফুটবল ডিপ্লোম্যাসি –

মোঃ নিজাম উদ্দিন | রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ডিসেম্বর ২১, ২০২২ ৬:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনা।প্রায় সতেরো হাজার মাইলের পথ।১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশ থেকে তাদের দূতাবাস ঘুটিয়ে নেয়।বাংলাদেশও আর্জেন্টিনা থেকে ১৯৯২ সালে তার দূতাবাস প্রত্যাহার করে নেয়।তখন থেকেই সে অর্থে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এই দুটো দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত নেই।দুটো দেশের কোথাও কারও কোনো দূতাবাস নেই।কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে নিত্য দিনের এক তুমুল চর্চায়, আলোচনায় ছিল আর্জেন্টিনা এবং মেসি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ দেশের অনেক জায়গায় বিশাল স্ক্রিনে আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীর উপস্থিতি এবং উল্লাস মেসির দেশের মানুষও মনে রেখেছে।বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা এবং মেসি প্রেমিদের খবর আর্জেন্টিনাও শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেছে।মনে রেখেছে।

 

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বুয়েন্স আয়ার্সের পথে পথে শোভা পাচ্ছে আর্জেন্টিনার পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাও।দুটো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে জোড়া লাগাতে ফুটবল যেন সেতুবন্ধনের কাজ করে যাচ্ছে।ফুটবল এবং মেসি দুটো দেশের জনগণের মধ্যে (পিপলস টু পিপলস) শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার যে নবদিগন্ত রচিত করে গেল তা দুটো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন যাত্রা।বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশীদের আর্জেন্টিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন চুয়াল্লিশ বছরের বন্ধ থাকা কূটনৈতিক সম্পর্ককেও নতুন করে মেরামতের কথা ভাবতে বাধ্য করছে।

 

আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে নতুন করে দূতাবাস খোলা হবে।বাংলাদেশও তাই ভাবছে।মানুষে মানুষের ভালোবাসার কাছে পররাষ্ট্রনীতির জটিল হিসাবও হার মানলো।নতুন করে সৃষ্টি হতে যাওয়া আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার স্থবির কূটনৈতিক সম্পর্ককে জোড়া লাগাতে ফুটবল এক দারুণ শক্তি হিসেবে কাজ করছে।এর নাম দেয়া যেতে পারে ‘ফুটবল ডিপ্লোম্যাসি’!

 

আর্জেন্টিনা এবং বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যে বোঝাপড়া ফুটবলকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে তা কূটনৈতিক সম্পর্ককে ডেফিনিটলি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।উভয় দেশের জনগণই এক দেশ থেকে অন্য দেশের মানুষের কাছে তুলনামূলক বেশি শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং নিরাপত্তা পাবে।সচরাচর অন্যান্য রাষ্ট্রে যা দেখা যায় না।

 

মানুষে মানুষে ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো অনেক বেশি টেকসই।অনেক বেশি অর্থপূর্ণ।২০২২ সালের বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের ‘ফুটবল ডিপ্লোম্যাসি’র জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।আর্জেন্টিনার কোনো শহরে,নাম না জানা একদল মানুষের হাতে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের পতাকা। উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। এই দৃশ্য অনেক গর্বের।অহংকারের।ভালোবাসার।মানুষে মানুষের নিখাঁদ ভালোবাসায় গড়ে উঠা এই সম্পর্কের ভিত অনেক শক্ত,অনেক মজবুত।

 

ফুটবলকে কেন্দ্র করে আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের বন্ধ হয়ে থাকা দূতাবাস গুলো যদি নতুন করে চালু হয়,নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়,তাহলে এটা হবে উভয় দেশের জন্যই এক দারুণ সুসংবাদ!

 

লেখক:রাজনৈতিক বিশ্লেষক