নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে বৈঠকে বসা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের প্রশ্ন ছিল, তাঁকে কি কেউ শারীরিকভাবে আঘাত করেছে? জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘না। ’ তবে তিনি শুনেছেন, তাঁর গাড়িতে ‘স্ক্র্যাচ’ (আঁচড়) পড়ে থাকতে পারে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, রাষ্ট্রদূত কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত? জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জানান, না। তিনি নিশ্চিত নন।
গত বুধবার ঢাকার শাহীনবাগে ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাকের’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। আর সে সময় তিনি নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়েছিলেন বলে সরকারের কাছে অভিযোগ করেন। সেদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। সেদিনের বৈঠক প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু মার্কিন রাষ্ট্রদূত নন, বাংলাদেশে সব কূটনীতিককে নিরাপত্তা দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকেও তিনি এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত চাইলে সরকার তাঁকে আরো নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে শাহীনবাগের একটি বাসায় যাবেন সে বিষয়ে তিনি জানতেন না। মন্ত্রী বলেন, “তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) ‘মায়ের ডাকে’ গিয়েছিলেন, ‘মায়ের কান্না’ শুনে এসেছেন। ”
মোমেন বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁদের জানিয়েছেন যে তিনি বৈঠক করছিলেন। এমন সময় তাঁর নিরাপত্তার লোকজন তাঁকে দ্রুত চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর গাড়ি আটকে ফেলতে পারে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (পিটার হাস) হুমকি বোধ করেছেন। তিনি যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়েছিলেন। ’
মন্ত্রী জানান, তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর ওই কর্মসূচির খবর কিভাবে ফাঁস হলো। জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে জানেন না। এ পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি গণমাধ্যম ও লোকজনকে আটকাতে পারবেন না। কারণ এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা আছে।
মার্কিন দূতের শাহীনবাগে যাওয়ার খবর কিভাবে আগাম জানাজানি হলো—সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তিনি জেনেছেন যে যারা রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারাই কিছু গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।
রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার বিষয়টি জানাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল কি না—সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা নাকচ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে আগেই সময় চেয়েছিল। ফোনে আলাপ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই আলাপের সময়ের কিছু আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়, তারা সরাসরি কথা বলতে চায়। এরপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্র তুলেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিলেন। তিনিও রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা এ দেশে দায়িত্ব পালনের সময় কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলবেন বলে সরকার আশা করে।