ঢাকামঙ্গলবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাধ্যমিকে ভর্তিতে একাধিক নাম, ভর্তি বাতিল এমন শিক্ষার্থীদের

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ১৯, ২০২২ ১:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির তালিকায় একই শিক্ষার্থীর নাম বারবার আসায় এই ডিজিটাল ভর্তি প্রক্রিয়ায় তথ্য শনাক্তে দুর্বলতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানের ভর্তি নিশ্চিত করতে তাঁরা এই অনৈতিক কৌশল বেছে নেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভর্তির লটারি হয়েছে, তা ভালোভাবে ডেভেলপ করা হয়নি।

দেখা গেছে, যাদের নাম বারবার এসেছে, এসব শিক্ষার্থী জন্মসনদ নম্বর, ছবি, নিজের ও মা-বাবার নাম এবং মোবাইল নম্বরের যেকোনো একটি পরিবর্তন করে সরকারি মাধ্যমিকে ভর্তির একাধিক আবেদন করেছিল।

এই অনৈতিক কৌশল ডিজিটাল লটারির সফটওয়্যার শনাক্ত করতে পারেনি। এ কারণে একটি বিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় একজন শিক্ষার্থীর নাম বারবার এসেছে। দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

 

এর মধ্যে সারা দেশে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বারবার আবেদন করার বিষয়টি চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে এমন শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) বেলাল হোসাইন বলেন, প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে বারবার আবেদন করা শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর ডাটাবেইস টেলিটকের কাছে থাকার কথা। এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

বেলাল হোসাইন বলেন, ‘ভর্তি লটারির কারিগরি বিষয়ে কাজ করেছে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড। এসব ভুলের বিষয়ে তারাই বলতে পারবে। আমি প্রশাসনিক বিষয়টি দেখি। ’

এ ব্যাপারে টেলিটকের ব্যবস্থাপক জাহিদ রহমান বলেন, এ পর্যন্ত সাত-আটটি বিদ্যালয়ে এমন শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তিনি সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি।

ভর্তি লটারির ফলাফলে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া গভ. মডেল গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রকাশিত তালিকায় ভর্তীচ্ছু এক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে ১৪ বার। মূল তালিকায় ১০ বার ও অপেক্ষমাণ তালিকায় তার নাম রয়েছে চারবার। ওই বিদ্যালয়ে অপর এক শিক্ষার্থীর নাম ভর্তির মেধাতালিকায় এসেছে পাঁচবার।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার, ‘ফলাফল দেওয়ার সময় এ ধরনের সমস্যা আমাদের নজরে পড়েছে। একই শিক্ষার্থী কিভাবে এতবার মূল তালিকায় জায়গা করে নেয়, এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কারণ লটারিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ’

খুলনায় করোনেশন সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির তালিকায় এক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে ৯ বার। প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতি ও দিবা শাখায় ভর্তির মূল তালিকায় শিশুটির নাম বারবার রয়েছে।

যশোরে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি তালিকায় রয়েছে ছেলের নাম। মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির তালিকায় এমন চিত্র দেখা যায়।

রাজশাহীতে প্রমথনাথ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর নাম প্রভাতি ও দিবা শাখা দুটিতেই রয়েছে। একই জেলায় গভ. ল্যাবরেটারি হাইস্কুলের এক শিক্ষার্থীর নাম তালিকায় দুইবার এসেছে। রাজশাহী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ফলাফলে এক শিক্ষার্থীর নাম তিনবার ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে দুইবার এসেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ভর্তি কমিটির সভায় এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চার ভর্তি নিশ্চিত করতে তিনি একাধিকবার আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আরো অনেকে ভর্তি হয়েছে। তাই আমিও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আবেদন করেছি। ’

একাধিকবার নাম আসা শিক্ষার্থীদের আরো কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ভর্তি কমিটির সভাপতি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। এ কারণে তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তারা কোনো সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।

টেলিটকের পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ছবিসহ জন্মসনদ বা অন্য কোনো ডাটা আগে থেকে সংরক্ষণ না থাকায় শিক্ষার্থীদের দেওয়া নতুন তথ্য যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলে তা উন্নত যন্ত্রপাতি দিয়েও শনাক্ত করা যাবে না। আগে থেকে তথ্যের ডাটাবেইস থাকলে তা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা সম্ভব হতো। মূলত ডাটাবেইস না থাকার কারণে ডিজিটাল লটারিতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। ’

তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপন প্রিয় জানান, যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভর্তির লটারি হয়েছে, নিঃসন্দেহে তা ভালোভাবে ডেভেলপ করা হয়নি। ভুল জন্মসনদ ব্যবহার করা হলেও তা যাচাইয়ের মতো সক্ষমতা সফটওয়্যারে ছিল না। আবার ছবির মাধ্যমেও সফটওয়্যারে তথ্য যাচাই করা সম্ভব, যা এখানে হয়নি। এসব ত্রুটি থাকায় লটারিতে একজন শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার এসেছে। অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে অনৈতিক পন্থা বেছে নেন। এ সংখ্যাই বেশি। তবে সর্বোপরি সফটওয়্যারটি নিম্নমানের হওয়ায় এতে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ সীমিত।