সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বর্ণাঢ্য কূচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রামে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হলো।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ এর ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সরকারি, বেসরকারি, রাজনৈতিক ও সমাজসেবী সংগঠনসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি বলেন, এই মহেন্দ্রক্ষণে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদাত্ত কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এ ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা লাভের জন্য বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিন্ম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ^ ছাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রামের মিরশরাইয়ে ৩০ হাজার একর ভূমি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ইন্ডাসট্রিয়াল পার্ক বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এ সন্ধিক্ষণে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ এর মধ্যে বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করা।
পরে তিনি প্যারেড পরিদর্শন ও কূচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার, কারারক্ষী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, গ্রাম রক্ষা বাহিনী, মেরিন ফিসারিজ একাডেমি, বিএনসিসি, স্কাউটস, যুব রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বর্ণাঢ্য কূচকাওয়াজে অংশ নেয়।
সকাল ১১.৩০ টায় তিনি চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একডেমী প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান আনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না এ স্লোগানকে সামনে রেখে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮ হাজার ৮১৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের সবার জন্য সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে ২৬ হাজার ৭৮০টি ঘর নির্মিত হয়েছে এবং ১৩ হাজার ৩০৭টি ঘর নির্মানাধীন রয়েছে। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বীর নিবাস। চট্টগ্রাম বিভাগে এ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ১৬৪টি ঘর নির্মণের জন্য সরকারের উদ্যেগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৬ টি ঘরের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ৭১৭ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একসাথে ৩০৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে বর্ণাঢ্য কূচকাওয়াজ ও সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানসমূহে পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ এর ডি আই জি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ্, মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।