মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া ঘটনা নিন্দা জানিয়ে সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই নিন্দা জানান।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে তেজাগাঁওয়ের শাহিনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন মায়ের ডাক’র সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় গিয়ে আরেকটি সংগঠনের নেতাদের তোপের মুখে পড়েন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
প্রিন্স বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি সেই অপরাজনীতি থেকে বাংলাদেশের কেউ তো নয়ই, বিদেশিরা আজকে নিরাপদ নয়। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণ হয় এই ঘটনার সাথে তারা জড়িত। তারা উসকানি দিয়ে সেখানে লোক পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী গাড়ির ওপর আঘাত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যিনি প্রতিনিধি অ্যাম্বেসেডর বা রাষ্ট্রদূত তাকে সেখানে হেনস্তা করা হয়েছে। এর আগেও একবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের পতাকাবাহী গাড়িতে এই সরকারের নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছিল- এই কথা কেউ ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে এই ঘটনার মধ্য দিযে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, এখানে যে একটা অপশাসন চলছে সেটাই আরো ফুটে উঠবে।
নিখোঁজ আবদুর রহিমের সন্ধান চেয়ে প্রিন্স বলেন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিমকে সরকার বহুবার তুলে নিয়েছিল, তার ওপর নির্মম অত্যাচার করেছিল, গ্রেপ্তার করেছিল, তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মিথ্যা মামলা সরকার দিয়েছিল। সেই আবদুর রহিমকে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে আনুমানিক রাত ৮টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনে আবদুল রহিমের পিতা, মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা আছেন। তারা গভীর উদ্বেগ-উতকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা একবার থানায় দৌড়াচ্ছেন, একবার ডিবি অফিসে যাচ্ছেন, আরেকবার জেলখানায় যাচ্ছেন। কোথাও কেউ আবদুর রহিম খোঁজ তাদের দিচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে আবদুর রহিমকে জনসমক্ষে হাজির এবং তাকে তার পরিবারের কাছে নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ইশরাক হোসেনের বাসায় যখন পুলিশ ও সাদা পোষাকে সদস্যরা তল্লাশি করে সেই সময়ে পুলিশের গাড়িতে স্থানীয় লোকজন আবদুর রহিমকে দেখতে পেয়েছে তাদের কাছ থেকে আমো এই তথ্যটি পেয়েছি। আবদুর রহিমের মাতা আবেদা খানম গত ১২ ডিসেম্বর ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার ফোন খোলা থাকলেও তার ফোন রিসিভ কেউ করেন নাই এবং ১৩ ডিসেম্বর থেকে ফোনটি বন্ধ আছে। এ ছাড়া গত ছয়দিন ধরে নিখোঁজ নেত্রকোনা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আতাউর রহমানের সন্ধান দাবি করেন প্রিন্স।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তা আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আবুল বাশার, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, কামরুজ্জামান দুলাল ‘নিখোঁজ’ ছাত্র দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিমের পিতা আবদুল হাই ভুঁইয়া, মা আবেদা খানম, ভাই আবদুল হামিদ, আবদুর রহমান, আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, আশিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।