দেশে যাতে কেউ নৈরাজ্য তৈরি করতে না পারে সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও অগ্নি সন্ত্রাসীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, তাদেরকে (বিএনপিকে) আর কোনো ক্ষমা করা হবে না, তাদেরকে কিসের ক্ষমা। তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশে নিয়ে তার সাজা আমি বাস্তবায়ন করব। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এক যৌথ সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আবারও বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলা করছে। চালডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে সরকার পতন করা যাবে না। সরকার পতন করা এত সহজ কাজ নয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না
তিনি বলেন, বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীই হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, এখন আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না। আজ বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করবো। অগ্নি সন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্র মানায় না। জিয়াউর রহমান কারফিউতন্ত্র দিয়ে গেছে। আর খালেদা দিয়েছে দুর্নীতিতন্ত্র। বিএনপির দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সহযোগী সংগঠনের এ যৌথ সভা হয়। দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিটি এলাকায় প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার নিপীড়নের পথ অবলম্বন করতে না পারে। তিনি আরও বলেন, সবাই প্রস্তুত থাকবেন। একটা মানুষের ক্ষতি যেন কেউ করতে না পারে। কেউ আগুন দিয়ে পোড়াতে এলে, যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাতটা ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। আর বসে থাকার সময় নাই। কোনো ক্ষমা নাই। আর তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনব। ব্রিটিশ সরকারকে বলব যে, তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাকে হ্যান্ডওভার করতে হবে বাংলাদেশের কাছে। দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব। তিনি এসময় জাতির পিতার খুনীদের দেশে ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমেরিকা খুনিদের পালতেছে, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলব এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সকলের মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ কারও পকেট থেকে আসে নাই বরং জাতির পিতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর অস্তিত্ব গভীরে প্রোথিত। বিএনপি উর্দ্দি পরা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে এসেছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, অগ্নি সন্ত্রাসীদের এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, এটা পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকে বলতে হবে তারা কি শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, খুন, মানি লন্ডারিং এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর আগে বহু যন্ত্রনা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। আমার কৃষক শ্রমিক, আমাদের নেতা-কর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। দেশের আর উন্নয়ন হবে না। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না জানিয়ে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, একেকজনে বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে।
ছয় বছরের মেয়ে রজুফা থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্নিমা ফাহিমা থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের কত নাম বলবো সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নাম প্রকাশ করেনি। তিনি বলেন, ২০০১ সালে তারা যে অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের উপর করেছে আমরা ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো তা করি নাই। আমরা তো তাদের উপর এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি। সেই পঁচাত্তর থেকে ২১ বছর এবং এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি।
তারেক জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, এতই নেত্বত্ব দেওয়ার শখ দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে। ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই তাদেরকে জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দেয়নি। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। তারা আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। বিএনপি-জামায়াত থাকতে দেশের কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নয়ন পোকার মত খেয়েছে। উন্নয়ন করতে মানসিকতা থাকা দরকার। দিকদর্শন থাকা দরকার।
গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত মিডিয়া এখন বিএনপির কাছে ধর্ণা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত করে না দিতাম এত মানুষের চাকরিও হত না এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। বিএনপি আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই মিডিয়া একটা উল্টা-পাল্টা লিখলেই তো মারতো। তার পরেও এত আল্লাদ কিসের, এত তেল মারা কিসের।