ঢাকাসোমবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কাসেমিরোর গোলে শেষ ষোলোয় ব্রাজিল

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
নভেম্বর ২৯, ২০২২ ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

পারস্য উপসাগরের বুক থেকে হলুদ ঢেউ এসে যেন আজ পড়ছিল দোহায়। শহরের রাস্তা থেকে মেট্রো-সব জায়গায় শুধু হলুদ আর হলুদ। শহরের নানা প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা হলুদের সেই স্রোত গিয়ে গিয়ে মিলল স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর মোহনায়। আসলে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে যেন দোহা দখল করে নিয়েছিল বিখ্যাত হলুদ জার্সির ব্রাজিলের সমর্থকেরা। আর সুইসদের বিপক্ষে লড়াইয়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪-এর সবুজ গালিচার দখল নিয়ে কাসেমিরোর গোলে ব্রাজিল ম্যাচটি জিতেছে ১-০ গোলে। এই জয়ে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোতে উঠে গেছে ব্রাজিল।

একটি গোলের জন্য ব্রাজিল যখন হাপিত্যেশ করে মরছিল, সেই সময় বক্সের ঠিক বাইরে বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। তাঁর ছোট করে দেওয়া পাস চলে যায় রদ্রিগোর কাছে। রদ্রিগোর পাস এক ড্রপে গিয়ে পড়ে কাসেমিরোর পায়ে। ৮৩ মিনিটে অসাধারণ এক হাফ-ভলিতে বল জালে পাঠান ব্রাজিলের মাঝমাঠের নেতা। বুটের বাইরের দিক শটটি নিয়েছিলেন কাসেমিরো, যেভাবে ব্রাজিলের সাবেক ডিফেন্ডার রবার্তো কার্লোস শট নিতেন। এ কারণেই হয়তো গোলটির সঙ্গে সঙ্গেই ক্যামেরা চলে যায় গ্যালারিতে থাকা কার্লোসের দিকে। হাসছিলেন তিনি।

অ্যাঙ্কেলের চোটের কারণে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচে খেলেননি নেইমার। শরীরনির্ভর ফুটবল খেলা সুইসদের বিপক্ষে নেইমারবিহীন ব্রাজিল কেমন করবে-এ ম্যাচের পূর্বকথনের মূল সুর ছিল এটাই। নেইমারবিহীন ব্রাজিলকে অবশ্য শুরু থেকে উজ্জীবিতই মনে হয়েছে। প্রথমার্ধে নিজেদের অর্ধে পাস-দেওয়া করে গতিময় ফুটবল খেলার চেষ্টা করে ব্রাজিল। নিচ থেকে খেলা তৈরি করে বেশ কয়েকবার গতি নিয়ে ওপরেও উঠে আসে তারা।

১৯ মিনিটে প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিল ব্রাজিল। বক্সের বাঁ প্রান্তে বল ড্রিবলিং করে সুইজারল্যান্ডের চারজন ডিফেন্ডারকে ব্যস্ত রেখে শেষ মুহূর্তে বক্সে বল বাড়ান ভিনিসিয়ুস। আওতার মধ্যে থাকলেও সেই বলে স্পর্শই দিতে পারেননি রিচার্লিসন। এর আগেও কয়েকবার বল নিয়ে বক্সে ঢুকলেও ২০ মিনিটের মধ্যে কোনো শট সুইজারল্যান্ডের পোস্টে নিতে পারেননি ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা। ব্রাজিলের আক্রমণগুলো সুইজারল্যান্ডের বক্সে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার সময় নেইমারের অভাবটা হয়তো টের পাচ্ছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে।

২৬ মিনিটে আবারও সহজ একটি সুযোগ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। এবার ডান প্রান্ত থেকে বক্সের ভেতরে নিচু ক্রস দিয়েছিলেন রাফিনিয়া। ফাঁকায় বল পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। কিন্তু সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমারকে একা পেয়েও বলটি তাঁর সোজা মারেন রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার। ৩০ মিনিটে রাফিনিয়ার দূরপাল্লার শটও সোজা সোমারের কোলে গিয়ে পড়ে। ১৯ থেকে ৩৮-লম্বা একটা সময় বল ঘোরফেরা করে সুইজারল্যান্ডের অর্ধে। এরপর একটি প্রতি আক্রমণ নিয়ে ব্রাজিলের বক্সের সামনে যায় সুইসরা। এরপর আবার ব্রাজিলের আধিপত্য। সব মিলিয়ে গোলশূন্য সমতা নিয়ে বিরতিতে যাওয়ার আগে সুইজারল্যান্ডের গোলে ৬টি শট নেয় ব্রাজিল, যার দুটি লক্ষ্যে রেখেও গোলের দেখা পায়নি তারা।

দ্বিতয়ার্ধের শুরুতেই নিষ্প্রভ পাকেতাকে তুলে রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার রদ্রিগোকে মাঠে নামান তিতে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্রাজিলের রক্ষণে চাপ তৈরি করে সুইসরা। ৫২ মিনিটে ভালো একটি আক্রমণও করে তারা। কিন্তু সেটা সুইজারল্যান্ডের ফরোয়ার্ড ব্রিল এম্বোলো পর্যন্ত পৌঁছায়নি ভিনিসিয়ুস শুয়ে পড়ে বলটি ঠেকানোয়।

সুইজারল্যান্ডের এই আক্রমণটির পরের সময়টা শুধুই ব্রাজিলের। ৫৬ মিনিটে ভিনিসিযুসের বাড়ানো বল পায়ে লাগাতে পারলেই গোল পেতেন রিচার্লিসন। কিন্তু আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা রিচার্লিসনের কিছুই যেন ঠিকঠাকভাবে হচ্ছিল না আজ। অবশেষে ৬৪ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের জালে বল পাঠান ভিনিসিয়ুস। মাঝমাঠ থেকে আসা পাস ধরে কাসেমিরো বল বাড়ান বাঁদিকে থাকা ভিনিকে। পায়ের কারুকাজে এক সুইস ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে তিনি অসাধারণ শটে বল পাঠান জালে।

গোল করে উদ্‌যাপনের কাজটাও সেরে ফেলেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু রেফারি অফসাইড হয়েছে কি না জানতে ভিএআরের সাহায্য নেন। মিনিটখানেক পর তিনি তিনি সিদ্ধান্ত জানান-এটি গোল নয়। পরে থ্রিডি অ্যানিমেশন দেখানো হয় মাঝমাঠ থেকে বলটি আসার সময় ডানপ্রান্তে রিচার্লিসন সেদিকে দৌড় দিয়েছিলেন। বলে কোনো স্পর্শ না দেওয়ার পরও তাই তাঁকে অফসাইড ধরা হয়েছে।

গোল বাতিল হওয়ার পর অবশ্য ভেঙে না পরে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় ব্রাজিল। পরপর কয়েকটি ভালো আক্রমণ করে তারা। এর ফলও দ্রুতই পেয়ে যায় তিতের দল। কাসেমিরোর গোলের পরও বেশ কয়েকটি আক্রমণ করে ব্রাজিল। কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি। তাতে কী, বিশ্বকাপে এই প্রথম সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তো পেয়েছে তারা। এই জয়ের পর ‘জি’ গ্রুপে ২ ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ব্রাজিল। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সুইজারল্যান্ড। তৃতীয় স্থানে থাকা ক্যামেরুনের পয়েন্ট ১। চতুর্থ স্থানে থাকা সার্বিয়ার পয়েন্টও ১।