জার্মানিতে বসবাসরত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নিয়ম শিথিল করতে চায় দেশটির সরকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অভিবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুবিধাও মিলবে। ইতিমধ্যে দেশটির সরকার অভিবাসীদের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে জন্য একটি খসড়া প্রতিবেদনও দিয়েছে।
বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী অভিবাসীরা আট বছর জার্মানিতে থাকলে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। খসড়া আইনে সেটি বদলে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এমনকি কেউ ‘ইন্টিগ্রেশন বা জার্মান সমাজে একীভূত হওয়ার জন্য বিশেষ দক্ষতা’ অর্জন করলে তিন বছর পরও আবেদন করা যাবে। তবে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব
বর্তমানে জার্মানিতে অভিবাসীদের সন্তানরা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পায় না। নতুন আইন হলে এই নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে দীর্ঘ সময় ধরে আইনগতভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের জার্মানিতে জন্ম নেওয়া সন্তানরা নাগরিকত্ব পাবে।
এর আগে জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মন্ত্রীরা ফেডারেল সরকারকে দ্রুত এই বিধান চালুর ওপর জোর দেন। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য লোকাল জানিয়েছে, অভিবাসীরা যাতে দ্বৈত নাগরিকত্ব পান, সেই সুবিধাও রাখা হচ্ছে। জার্মানি বর্তমানে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইস নাগরিকদের এই সুবিধা দিয়ে থাকে।
পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য
সরকার গঠনের সময় জার্মানির নাগরিকত্ব ও অভিবাসন আইন পরিবর্তনে ঐকমত্যে পৌঁছায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডি এবং পরিবেশবান্ধব গ্রিন পার্টি ও ব্যবসাবান্ধব এফডিপি। এই তিন দলই চায় অভিবাসীদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধানসহ বসবাস ও আশ্রয় আবেদনের নিয়মগুলো সহজ করতে।
তবে এই উদ্যোগের বিরোধিতাও করছেন কোনো কোনো রাজনীতিবিদ। বিরোধী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) সংসদ সদস্য থর্স্টেন ফ্রাই এ বিষয়ে বিল্ডকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘জার্মান পাসপোর্টকে কোনোভাবেই আবর্জনায় পরিণত করা যাবে না। ’
ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের রাজনীতিক আন্দ্রেয়া লিন্ডহোলৎস উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, প্রস্তাবগুলো আইনে পরিণত হলে ‘জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশিরা ইন্টিগ্রেশন বা একীভূত হওয়ার একটি মহৎ প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হবেন’।
জার্মান ব্লু কার্ড বেশি পাচ্ছেন কোন দেশের নাগরিকরা?
জার্মান অভিবাসী ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি ২০১৮ সালে ইউরোপের বাইরের ২৭ হাজার নাগরিককে ব্লু কার্ড দিয়েছে। এ তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। জার্মান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটির প্রায় সাত হাজার নাগরিককে ব্লু কার্ড দেওয়া হয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। একই সময়ে প্রায় দুই হাজার চীনা অভিবাসী এ সুবিধা পেয়েছে।
ব্লু কার্ড প্রাপ্তির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে রাশিয়ার এক হাজার ৬০৩ জন নাগরিক জার্মান ব্লু কার্ড পেয়েছে। এ ছাড়া তুরস্কের প্রায় এক হাজারের অধিক নাগরিক ২০১৮ সালে জার্মান ব্লু কার্ড পেয়েছে। তালিকার পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। ২০১৮ সালে দেশটির এক হাজার নাগরিক জার্মান ব্লু কার্ড পেয়েছে।
বাড়ছে জনপ্রিয়তা
২০১২ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দক্ষ অভিবাসীদের ব্লু কার্ড প্রদান সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পর থেকে জার্মানিতে ব্লু কার্ড দেওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে মোট ১১ হাজার অ-ইউরোপীয়কে ব্লু কার্ড প্রদান করেছিল জার্মানি। আর ২০১৮ সালে তা দাঁড়ায় ২৭ হাজারে। সূত্র : ডয়চে ভেলে