হাঁকডাক করে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরকারি ৪৪টি দপ্তর এক ছাতার নিচে আনার জন্য ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ নামে যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল তা থমকে গেছে। কাগজে কলমে কাজ চলছে বলা হলেও মূলত চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে সেটি এখন সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় নেই। ফলে চলতি অর্থ বছরে এই প্রকল্পটি যে আর দৃশ্যমান হচ্ছে না সেটি নিশ্চিত।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যয়ের লাগাম টানতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে থাকা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো আপাতত স্থগিত রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই মূলত ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়। এটি এখন সরকারের সি ক্যাটাগরিভূক্ত প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বড় বড় প্রকল্পগুলোকে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে এ ক্যাটাগরিভূক্ত করে সেগুলোর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসব প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ এর মধ্যেই ব্যয় করা হয়ে গেছে, সেসব প্রকল্প বি ক্যাটাগরিতে ধরা হয়েছে। এসব খাতে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আর কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে সি ক্যাটাগরিভূক্ত করে সেগুলোর আপাতত খরচ করা স্থগিত থাকবে।
জানা যায়, যেসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর দিকে রয়েছে, এখনো সম্ভাব্যতা যাচাই পর্যায়ে রয়েছে অথবা কিছুদিন পরে বাস্তবায়ন করলেও জনসেবায়, উৎপাদনে বা অর্থনীতিতে কোন প্রভাব পড়বে না, সেগুলোকে ধরা হয়েছে সি ক্যাটাগরিতে। এই খাতে অফিস ভবন নির্মাণ বা বর্ধিতকরণ, প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প, আবাসিক ভবন নির্মাণ বা সংস্কার, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি প্রকল্প রয়েছে। এরকম প্রায় দেড়শ প্রকল্প রয়েছে এই বছরের এডিপিতে। এসবের মধ্যে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্পটিও অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকেটর কারণে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ প্রকল্পটির কাজ আপাতত স্লোলি করা হচ্ছে। সেটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে সি ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। তবে টেন্ডারসহ দৃশ্যমান কাজ চলতি অর্থ বছরে হচ্ছে না। সি ক্যাটাগরি হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা বি ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরকারি ৪৪টি দপ্তর এক ছাতার নিচে আনার জন্য ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ নামে যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। গত জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে তা নানা কারণে হয়নি। পরে বছরের মধ্যবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে নকশা ও মডেল তৈরি করা হয়। আর সেই নকশা ও প্রস্তাবিত মডেলও চট্টগ্রামে এসে দেখে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। দ্রুত গতিতে ডিপিপি প্রণয়নসহ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল আলোচিত এ প্রকল্পের।
প্রকল্পটির ১১০ একরের মধ্যে ৭৩ একর জায়গা ছিল ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। ফলে অধিগ্রহণ বাবদ সরকারকে তেমন অর্থ খরচ করতে হবে না। জায়গাটি দেখতে ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আসেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। দেশের প্রথম সমন্বিত এ সরকারি গুচ্ছ অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে কালুরঘাট সেতুর এক কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পাশের জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। নগরের চান্দগাঁও (বন্দর) মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বিএস ১২১ দাগের ৭৩ দশমিক ৪২ একর জায়গা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্তভাবে করা হয়।
আরও জানা যায়, চলতি বছরই বিশাল এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেখানে সর্বমোট গড়ে তোলার কথা ছিল ৪৪টি সরকারি অফিস। বন্দর মৌজার হামিদ চরের ৭৫ একর জায়গায় নির্মাণ হবে সরকারের এই প্রকল্প। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’। মালেশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার আদলে এটি নির্মাণ করা হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মূলত নগরে চাপ কমাতে ও সাধারণ মানুষকে এক জায়গায় সব ধরনের সেবা দিতে প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগটি নেয় জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশায় আরও ছিল জুডিশিয়ারি বা আদালতের জন্য নির্ধারিত স্পেস, প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি স্যাটেলাইট অফিস, মেলার জন্য স্পেস, সার্কিট হাউস ও রিসোর্ট, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, কনভেনশন সেন্টার, ক্লাব হাউস, শপিং মল, মাল্টি স্টোরেড কার পার্কিং, স্কুল-কলেজ, পরিবহন পুল, পেট্রোল পাম্প, স্মৃতিসৌধ, নভোথিয়েটার, মসজিদ, মুক্ত মঞ্চ ও কালচারাল কমপ্লেক্স, কনডোমিনিয়াম, সরকারি কর্মচারীদের আসাসিক এলাকা, ওয়াচ টাওয়ার, হাইটেক পার্ক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতাল, ইউটিলিটি ভবন ও নার্সিং ইনস্টিটিউট।