দশ তলা এক ভবনে দীর্ঘদিন আটকে থাকা নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডের নির্মাণ কাজে অবশেষে গতি এসেছে। প্রকল্পটিতে গলার কাঁটা হয়ে উঠা ১০ তলা সেই ভবনটিকে অক্ষত রেখে এ্যালাইমেন্ট পরিবর্তন করে নতুন করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী জুনের আগে যান চলাচলের জন্য রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় ৪১৭ দশমিক ৫০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া ড্রেন নির্মাণ, ৪টি বক্স কালভার্ট, ১০ ক্রস কালভার্ট, ২০০টি স্ট্রিট লাইটও স্থাপনের কাজ মিলে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। যানজট কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ সহজ করার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানে এমন একটি রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ৬ লেনের সংযোগ সড়ক নির্মিত হলেও নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ করা হলে বহদ্দারহাট কর্ণফুলী সংযোগ সড়কের সুফল বাকলিয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষ পাবে বলে উল্লেখ করে প্রকল্পটির উপর জোর দেয়া হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০ তলা একটি ভবনের কারণে নির্ধারিত সময়ে এটির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সড়কটির দুই দিকের কাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও মাঝখানে ওই ১০ তলা ভবনে রাস্তাটি আটকে যায়। এই ভবনের কারণেই থমকে যায় প্রকল্পের কাজ।
সিডিএ’র অনুমোদিত ভবনটি নিয়ে বেকায়দায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। এই ভবনটি গুড়িয়ে দিয়ে রাস্তার কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অনুমোদিত ভবনটি ভাঙতে হলে সিডিএকে ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১১ কোটি টাকা এবং ভবনটি সরাতে আরো অন্তত ৪ কোটি টাকা মিলে ১৫ কোটি টাকার চাপে পড়ে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চায়। অবশ্য ওই সময় মন্ত্রণালয় বাড়তি ব্যয় অনুমোদন না দিয়ে বিকল্প বের করার পরামর্শ দেয়।
একই সাথে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটির সুপারিশে গঠন করা হয় একটি টেকনিক্যাল কমিটি। টেকনিক্যাল কমিটি ভবনটি না ভেঙে সড়কের নকশা পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। নানা প্রক্রিয়া এবং আনুষ্ঠানিকতা শেষে একনেক-এর সভায় ভবনটি মাঝখানে রেখে রাস্তাটির এ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয়ও প্রায় ১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়। একনেক বাড়তি ব্যয়ও অনুমোদন করে। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দশ তলা ভবনে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। তবে সিডিএ বলেছে, মাস তিনেকের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করে এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। দশ তলা ভবনটি রেখে নতুন করে ১০০ মিটারের মতো জায়গায় নতুন করে দু’পাশে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে নতুন নকশায় মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী জুনের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রাস্তাটি চালু হলে নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসার পাশাপাশি ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।