ঢাকামঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১ সপ্তাহ ধরে সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-জ্বর, হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
নভেম্বর ৭, ২০২২ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর বাতাসের আর্দ্রতা কমতে শুরু করার সঙ্গে বাড়ছে ধুলাবালি। আবহাওয়ার এই পরির্বতনে রাজধানীতে ক্রমে বাড়ছে বায়ুদূষণ। এসব কারণে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে মৌসুমি রোগের প্রকোপ।

গত দুই দিন ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মহাখালী উদরাময় হাসপাতাল (আইসিডিডিআরবি) ঘুরে দেখা গেছে, এসব হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে সাধারণ সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-জ্বর, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগসহ নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, ডায়রিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং চর্মরোগের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে হাসপাতালে। এর মধ্যে হাসপাতালে শিশুরা বেশি আসছে ব্রংকিউলাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি এবং সাধারণ সর্দি-কাশি নিয়ে। আর বয়স্করা আসছেন অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (সিওপিডি) ও চর্ম রোগ নিয়ে।

 

গতকাল রবিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিচতলার ২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স চার মাস বয়সী শিশু লামিয়ার পরীক্ষা-নীরিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়েছে মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকা থেকে। লামিয়ার মা লুত্ফা ইসলাম জানান, সকালে হঠাৎ শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রথমে শিশুটিকে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। তাতেও শ্বাসকষ্ট না কমায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আমাদের হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। এখানকার ৬৮০টি শয্যার একটিও বর্তমানে ফাঁকা নেই। আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, এইচডি, এসকেবির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, আমরা দিতে পারছি না। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গত দুই সপ্তাহে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ২০০ রোগী বেশি আসছে। ’ তিনি জানান, সাধারণ সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-জ্বরের সঙ্গে ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমা, নিউমোনিয়ার রোগী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে দুই মাস বয়সী শিশুরা বেশি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিত্রও এক। গত শনিবার হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ সারি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৬৫৪ জন রোগী বহির্বিভাগ থেকে টিকিট নিয়ে এখানে এসেছে এন্ট্রি করাতে।

সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন রায়ের বাজার এলাকার ফিরোজ উদ্দিন। খুব জোরে শ্বাস নিচ্ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমার শ্বাসকষ্ট অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিবছর শীত আসতে শুরু করলে আমার শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায়। ’

ফিরোজ উদ্দিনের মতো আরো বেশ কয়েকজন সেখানে চিকিৎসা নিতে এসেছে। যাদের বেশির ভাগের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, অ্যাজমা ও চর্মরোগ। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগের শিশু ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে, এরই মধ্যে ৩৫০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।

হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক শাহেদুর রহমান জানান, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০ জন শিশুকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বেশির ভাগ শিশু সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-জ্বরের সঙ্গে নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছে।

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশু।

রাজধানীয় উত্তর কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা রূপা আক্তার তাঁর চার মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে গত চার দিন এই হাসপাতালে আছেন। কথায় কথায় কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, চিকিৎসকরা তাঁকে শিশুটিকে নিয়ে আরো দুই দিন সেখানে থাকতে বলেছেন। কারণ ডায়রিয়া বন্ধ হলেও শিশুটির শারীরিক অবস্থা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

আইসিডিডিআরবির ইউনিট ইনচার্জ (গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টিনাল) ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সময়টায় শিশুদের ডায়রিয়া বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ রোটা ভাইরাস। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বেশি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শিশুদের এই রোগ।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় এখনো শীতের প্রকোপ শুরু হয়নি। অথচ রোগী বাড়তে শুরু করেছে। এর মূলে রয়েছে পরিবেশদূষণ। এর জন্য নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা জরুরি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। এখন যেহেতু মানুষ মাস্ক পরা কমিয়ে দিয়েছে সে জন্য সহজেই  ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়ছে। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘অ্যাজমার অন্যতম প্রধান কারণ অ্যালার্জি। কোনো খাদ্যে কারো অ্যালার্জি হলে যথাসম্ভব তা পরিহার করা উচিত। আর ধুলাবালি, ধোঁয়া, গন্ধ, ঘরের ঝুল ইত্যাদি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।