‘শেখ হাসিনা এখন ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু ডিসেম্বরে ছেড়ে দেব না। ডিসেম্বরে রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দখলে থাকবে, আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে; বিএনপির নয়। ’
গতকাল শনিবার রাজধানীর বাড্ডায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
‘বিএনপি-জামায়াত এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদ’ জানিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিকেল ৩টা থেকে মিছিলটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ১টা থেকেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। রাজধানীর আফতাবনগর, মেরুল বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা ও নতুনবাজারসহ পুরো এলাকা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন নেতাকর্মীরা। মধ্যবাড্ডার প্রধান সড়কে খোলা ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে যোগ দেন বেরাইদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে এসে বরিশালে বিএনপির সমাবেশের কথা ভাবছি। তারা টাকা দিয়ে ছয় জেলার লোক নিয়ে দু-চার দিন আগে থেকে বরিশালে জমায়েত করেছে। আর ঢাকায় আমাদের এখানে ছয় থানার লোক, যা বরিশালের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমার সামনে মিছিলের মাথা কোথায় জানি না। পেছনের মাথা আমেরিকান দূতাবাস পর্যন্ত গেছে। (বিএনপি) বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। তাঁরা (বিদেশিরা) এখানেই থাকেন। তাঁরা দেখুক কার কত শক্তি। ’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনে ডিসেম্বর মাস। আপনারা নাকি শেখ হাসিনাকে হটিয়ে খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসবেন? ইরানের ইমাম খোমেনি স্টাইলে ঢাকার রাজপথে বিপ্লব ঘটাবেন? জনতার শক্তির কাছে আপনাদের এই রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে। ’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা ভুলে যান। নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলেন। এটি আর হবে না। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা সর্বোচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছেন। আমাদের কোনো দোষ নেই। ওইটা জাদুঘরে চলে গেছে। ’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিসেম্বরে মোকাবেলা হবে, আন্দোলনে হবে, ভবিষ্যতে নির্বাচনে হবে। ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে খুনিদের বিরুদ্ধে। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে, ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড বিএনপির বিরুদ্ধে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ।
বিএনপির উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের আর একটি মানুষের ওপর আঘাত করলে এক শ মানুষের আঘাত নেওয়ার জন্য আপনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যতই ষড়যন্ত্র-বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন, আমরা তা সফল হতে দেব না। ’
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সমাবেশের নামে তারা যদি আবার কোনো উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ওই কেরানীগঞ্জের কারাগারে আমরা দেখব। দেশ থেকে পালানো তারেক রহমানের নির্দেশে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, ঢাকাবাসী তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। ’
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে বলেই বিএনপি সমাবেশ করতে পারছে। কিন্তু সভা-সমাবেশের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথেই প্রতিহত করবেন।
সমাবেশ শেষে দলের নেতাকর্মীরা মধ্যবাড্ডা থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি নতুনবাজার গিয়ে শেষ হয়।