বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আবারও ভোট চুরি করবে, খুন করবে— এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে, খেলা হবে আন্দোলনে-নির্বাচনে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, ভুয়া ভোটার বানানোর বিরুদ্ধে খেলা হবে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে (পুরাতন বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ) ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কত লোক হয়েছে, তার খবর নিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবের খবর কী? তিনি টাকার গুদামে ঘুমিয়ে আছেন। ঢাকা জেলা সম্মেলনে কত লোক হয়েছে, খবর নেন। মিটিংয়ে যদি থাকেন, ঢাকার ছবি দেখুন। আমাদেরটা দেখুন। চট্টগ্রামের পলোগ্রাাউন্ডে শেখ হাসিনা যাবে দশ লাখ লোক দেখাবো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির সম্মেলনে কয়জন লোক হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। আজকে শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে কত লোকজন হয়েছে, তা আপনারা দেখে যান। এখানে আমাদের নেত্রী নেই। তারপরও কত লোক হয়েছে।
তিনি বলেন, রংপুরে একটা সমাবেশ হচ্ছে। কত রঙ্গ দেখাইলা রে জাদু। রঙ-বেরঙ্গের নাটক। তিনদিন আগে রংপুর এসে সবাই শুয়ে আছে। বাড়ির ছাদের ওপর, গুদাম ঘরে শুয়ে আছে। ফখরুল সাহেবের খবর কী? আমাদের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ছবি দেখুন।
সাম্প্রদায়িক খুনির হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও নিরাপদ নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই। যতই নাচানাচি করেন, লাফালাফি করেন, দুবাই থেকে টাকা আসে। খোঁজ পেয়েছি, ব্যবস্থা হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে, তারা যত চেঁচামেচিই করুক, যত সমাবেশ করুক, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে দক্ষ প্রসাশকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নাম শেখ হাসিনা। আমাদের ক্রাইসিস ম্যানেজার হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
এর আগে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় সম্মেলনে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
এ সময় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, দুর্যোগ ব্যবস্থা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আজকের মহাসমাবেশ, এর উচ্ছ্বাস-প্লাবন মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। আজকে যারা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য হুঙ্কার দিচ্ছেন, তারা ভুলে যান কেন যে ২০১৪ সালে তান্ডব করেছেন, ১৫ সালে আগুন সন্ত্রাস করেছেন। তখন খালেদা জিয়া লেজ গুটিয়ে নিয়ে গুলশানে চলে গেছেন। আপনাদের মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি করবেন? সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র সৃষ্টি করবেন? এটা হতে দেব না। ৭৫’র ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার হয়েছে। জীবিত না থাকায় জিয়াউর রহমানের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলকে হত্যার দায়ে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো। স্বাধীনতা বিরোধীদের যুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, আজকের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ দিতে চাই, যারা বিভিন্ন জায়গায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে নানা কথা বার্তা বলছেন, তাদের ম্যাসেজ দিতে চাই, আজকে ঢাকা জেলার সম্মেলনই আপনাদের চেয়ে বেশি লোক হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, তারা এখন মানবাধিকারের কথা বলে মায়াকান্না করে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই অপশক্তিকে রুঁখে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতা দখল করে নেবে বলে শুনেছি। তারা নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে। বিএনপি এটি কীভাবে করতে পারে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে চলে। এ সমাবেশে লাখো জনতার উপস্থিতি বলে দিচ্ছে আমরা আবারও সরকার গঠন করবো। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকার জয় নিশ্চিত করতে হবে, ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
মির্জা আজম বলেন, বিএনপি সভা সমাবেশ করছে। আমাদেরও আগামী এক বছরে অনেক কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড, ইউনিট কমিটির উদ্যোগে বড় জনসভা করতে কেন্দ্রের বা মহানগরের অনুমোদন প্রয়োজন নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত সভা, বিশেষ সভা, জনসভা করতে করো নিদের্শনার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওয়ার্ড, ইউনিট বা থানা কমিটি যে কোনো কর্মসূচি দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর নাকি খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন। আগামী দুই মাস ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল জনসভা করে জানান দেব সাংগঠনিক শক্তি। বুঝিয়ে দেব কারা দেশ চালাবে। আর কারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী।
সম্মেলনের শেষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে বেনজীর আহমদকে সভাপতি ও পনিরুজ্জামান তরুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।