শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের কাঁদিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শেষ বিদায় নিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ার। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে একটি লাশবাহী গাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় তার গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
এদিকে শাহরিয়ারে মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন তার সহপাঠীরা। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে অনেককে। তার আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিল মতিহারের সবুজ ক্যাম্পাস। শাহরিয়ারের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠীরা। শাহরিয়ারকে শেষ বিদায় জানাতে অনেকেই ভিড় করেন লাশবাহী গাড়ির চারপাশে।সরেজমিনে দেখা যায়, শাহরিয়ারের লাশবাহী গাড়ি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার সহপাঠীরা। একজন আরেক জনের কাঁধে ভর করে কান্না করছেন। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় তাদের। এ সময় শিক্ষকদের চোখেও পানি দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে শাহরিয়ারের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বাস যোগে শিক্ষার্থীরা দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। নিহত শিক্ষার্থীকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই সারোয়ার শাকিল।কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত শাহরিয়ারের সহপাঠী মিলন ইসলাম বলেন, এমন কষ্টদায়ক মৃত্যু যেন দ্বিতীয়টি না ঘটে। তার অকাল চলে যাওয়া আমরা মানতে পারছি না। আমাদের বন্ধু কাল আমাদের মাঝে ছিল, আজ আর নেই। এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
শাহরিয়ের বড় ভাই গোলাম সরোয়ার শাকিল কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, এই সময়ে একজন বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইয়ের জানাজায় দাঁড়ানো যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের সকলের জানা উচিৎ আমরা সবাই রাষ্ট্রের সম্পদ। তার থেকে বড় কথা আমরা পরিবারের সস্পদ। আমি জানি না এই কফিনের ওজন আমার পরিবারের সদস্যরা কেমন করে বহন করবে।
এর আগে সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় মসজিদে শাহরিয়ারের জানাজায় সম্পন্ন হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান উল-ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও নিহত শাহরিয়ারের বড় ভাই, চাচাতো ভাই, সহপাঠীসহ ককেয়শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান শাহরিয়ার। বিকট শব্দ পাওয়ার পর কয়েকজন ছুটে গিয়ে তাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। তার মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।