ঢাকাশুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অধ্যাপক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২০০ কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ১৯, ২০২২ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মদ কাউসাসের কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট (প্রতিস্থাপন)-এর মধ্য দিয়ে ১২ শ কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্নে নেতৃত্ব দিলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। এর আগে কোনো চিকিৎসকের অধীনে এতো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়নি।

অধ্যাপক কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকার শ্যামলীস্থ সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ৪৫ বছর বয়সী কিডনি বিকল রোগী মোহাম্মদ কাউসারের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু করেন। শেষ হয় রাত ১০টায়।

কিডনি দাতা (ডোনার) ছিলেন রোগী কাউসারের স্ত্রী। 

অধ্যাপক কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ জনের বিশেষজ্ঞ টিম কিডনি প্রতিস্থাপনে সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, কিডনি গ্রহিতা এবং কিডনি দাতা উভয়েই ভালো আছেন। রাতেই পোস্ট অপারেটিভ রুমে পাঠিয়ে চিকিৎসকদের অবজারভেশনে রাখা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আশা করি, আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যেই তারা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিতে পারবেন। এরপর প্রথম তিনমাস ঢাকায় থেকে প্রতি সপ্তাহে ফলোআপ করতে হয়। এরপর মাসে একবার করে ফলো আপ করলেই চলে। ’

বিনা পারিশ্রমিকে এক হাজার দেশ-বিদেশে আলোচনায় এসেছিলেন দেশের প্রথিতযশা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন।

অধ্যাপক কামরুল ইসলামের বলেন, ‘আমি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছি। আমাদের সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যের সমান। শ্যামলীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এখানে সাকসেসফুলি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে কিন্তু লোকজন এই জায়গাটিকে হয়তো তেমন একটা পছন্দ করছেন না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে, ভাড়া বাসা ছেড়ে নিজস্ব জায়গায় একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব। এক বিঘার মতো জমি পেলে হাসপাতালের প্যাটার্ণে একটি ভবন তৈরি করে বর্ধিত পরিসরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে চাই। যেখানে থাকবে উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য সুবিধা। এটা স্ট্যান্ডার্ড এবং গোছানো ওয়েতে শুরু করতে চাই। আমরা তো শুরু করেছিলাম এক্সপেরিমেন্টালি, একটা ভাড়া বাসায়। বিঘা খানিক জমি পেলে ওইরকম একটা হাসপাতাল করা যায়। তবে সরকার জমি দিলে খারাপ হয় না। এক টুকরো জমি পেলে ইনশাআল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করা যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দুটো মাত্র অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রয়েছে। এই দুটো অপারেশন থিয়েটার দিয়ে খুব বেশি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যায় না। আরো অনেক ধরনের অপারেশন পরিচালনা করা হয় এখানে। বর্তমানে আমাদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনদের সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য ওটির সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার। মানে, আমরা আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে চাই। ’

অধ্যাপক কামরুল আরো বলেন, কিডনি বিকল রোগীদের চাপ অনেক। সারা দেশ থেকেই রোগীরা এখানে আসেন। এর মধ্যে গরিব রোগীর সংখ্যাই বেশি। এখনো ৫০-৬০ জন কিডনি বিকল রোগী অপেক্ষায় আছেন ট্রান্সপ্ল্যান্টের সিরিয়ালের জন্য। এখন আপাতত সপ্তাহে পাঁচটি ট্রান্সপ্ল‍্যান্ট করা হচ্ছে। শুরুর দিকে এই হাসপাতালে প্রথম দিকে মাসে একটি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হতো। এরপর সপ্তাহে একটি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট হতো। চলতি বছর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করছি। তবে কমপক্ষে ছয়টি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট হওয়া দরকার। তাতে করে প্রতিদিন একটি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন সম্ভব। এতে রোগীদের অপেক্ষার প্রহর কম দীর্ঘ হয়। কেননা, বিকল কিডনি নিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে অপেক্ষা করা রোগী ও রোগীর পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর। ’

তিনি জানান, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীদের প্রতিমাসে একবার ফলোআপে আসতে হয়। প্রতিবার ৫ থেকে ৬ শ টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দেওয়া হয় আমাদের পক্ষ থেকে। প্রতিমাসে চার-পাঁচ লাখ টাকার পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘আমৃত্যু আমি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে যেতে চাই। সাধারনত ডোনেশনের কোন টাকা বা অর্থ গ্রহণ করি না আমরা। তবে কেউ মেশিনপত্র দিতে চাইলে সেটা গ্রহণ করি। আমার একটা থিওরি আছে। সেটা হলো, হাসপাতালের অন্য কোনো খাত থেকে আয় হবে এবং এই খাতে সেটা ব্যয় হবে। এভাবে মূলত আমরা এডজাস্টমেন্ট করি। এভাবেই আমরা হাসপাতাল চালিয়ে আসছি। আমাদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রক্রিয়া হচ্ছে অর্কিডের মত। অর্কিড যেমন কোনো গাছের ওপর জন্মালে সে গাছটি মরে না। সেরকম এই প্রতিষ্ঠান মরবে না কিন্তু অর্কিডের মতো ফুল দেবে। আমি আসলে আমার থিউরির ওপর চলতে চাই যে, দেখি কতটুকু করা যায়। ’

জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে কম খরচে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয় শ্যামলীর এই সিকেডি হাসপাতালে। ট্রান্সপ্ল্যান্ট বাবদ রোগীর কাছ থেকে কোনো ফি নেন না অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। ট্রান্সপ্ল্যান্ট পরবর্তী বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্যও কোনো ফি নেন না; এমনকি রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বিনামূল্যে করা হয়।