বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে এই সরকার। উন্নয়নের নামে জনগণের সম্পদ, অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করছে। জনগণের হাজার কোটি টাকার লুটপাটের হিসাব একদিন দিতে হবে সরকারকে।
বিএনপির সারা দেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচির প্রথম সমাবেশে আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এখনো সময় আছে নিরাপদে সরে দাঁড়ান। না হয় পালানোর পথ পাবেন না। এই সরকার আবারও একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন করতে চায়। সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। আমরা দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে ফিরে যাব না। ’
দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবসহ সব স্থানে দলীয়করণ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের নির্দেশেই র্যাব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শুধু র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ নেই, সরকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে সভাসমাবেশ করতে গিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পাঁচজন কর্মীকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, অতীতেও একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল, এখনো একই কায়দায় একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মির্জ ফখরুল তার বক্তব্যে দাবি করেন, মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় কিছু অতিউৎসাহী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে। দেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে, শতবাধা দিয়েও বিএনপির নেতাকর্মীদের আর ঠেকানো যাবে না। এই পলোগ্রাউন্ড ময়দানের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে অবৈধ সরকার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তিনি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ সারা দেশে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই মাটি বারো আউলিয়ার মাটি, এই মাটি সূর্যসেনের বিপ্লবী মাটি, এই মাটিতেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই বীর চট্টগ্রাম থেকেই গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের দ্বিতীয় মাত্রা শুরু হয়েছে। সামনের এ লড়াই বড় শক্ত লড়াই, এ লড়াই গণতন্ত্রের, এ লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই, এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। ’ তিনি নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানান।
বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক ডাক্তার শাহদাত হোসেনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
সমাবেশে বিশিষ অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দশ বার বছরে উন্নয়নের নামে যা লুট এবং যা করেছেন কড়ায় গণ্ডায় তার হিসাব দিতে হবে। তিনি সরকারের কতিপয় উৎসাহী কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের চাটুকারী করা বুদ্ধিজীবীদের শ্রীলঙ্কার গোতাবায়া সরকারের সমর্থকদের পরিণতির কথা মনে করিয়ে দেন।
আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা জ্বলে-পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে, তারাই আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাল্লাহ। চট্টগ্রামের মানুষ শেখ হাসিনাকে বার্তা দিয়ে দিয়েছে এখনই পদত্যাগ করুন। ভোট চুরি ও উন্নয়নের নামে লুটপাটের ভাগী হওয়ার সুযোগ যারা খুঁজছেন তাদেরকেও চট্টগ্রামবাসী বার্তা দিয়ে দিয়েছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন দেশে হাসিনা তন্ত্রের অপশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে। শেখ হাসিনা দেশের সাধারণ মানুষের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ভোট চোর, জনগণের অর্থ লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের যুদ্ধে নেমেছে, সেই যুদ্ধে অবশ্যই মানুষের জয় হবেই।