ঢাকাশুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এবার ফলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ৫, ২০২২ ১২:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশের বাজারে গত কোরবানির ঈদের আগে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া আপেল এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। বড় সাইজের আনার কেজি ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সেটি এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। একই অবস্থা আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা ও কমলার ক্ষেত্রে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকেই ফল খাওয়া ছেড়েছে, আর কিনলেও কমিয়েছে পরিমাণ।

তারা বলছে, বিদেশি ফলগুলো এখন আর নাগালের মধ্যে নেই। তাই সামর্থ্যের মধ্যে দেশি যেসব ফল রয়েছে, সেগুলোই খাচ্ছে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

ফল বিক্রেতারা বলছেন, এখন বাজারে যেসব ফল আছে, সেগুলোর ৮০ শতাংশের বেশি বিদেশি। দাম বেশি থাকায় ক্রেতারা ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে বিক্রিও অর্ধেক কমে গেছে বলেও তাঁরা জানান।

ফল আমদানিকারকরা বলছেন, বিদেশি ফলকে বিলাসপণ্য হিসেবে দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং কনটেইনারভাড়া বৃদ্ধি। এসব কারণে ফল আমদানি কমছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ফলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

গত সোমবার রাজধানীর বাড্ডা, গুলশান, কালাচাঁদপুর ও কুড়িল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় আপেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। তিন মাস আগে, অর্থাৎ কোরবানির ঈদের আগে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আনার বড় সাইজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, ছোট সাইজের আনার ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তিন মাস আগে বড় সাইজের আনার কেজি ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং ছোট সাইজেরটা ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আঙুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তিন মাস আগে আঙুর বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। চীনা কমলা কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় এবং দেশি কমলা বিক্রি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। চীনা কমলা আগে বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।

আমদানি ফলের সঙ্গে বেড়েছে দেশি ফলের দামও। গুলশান কালাচাঁদপুর এলাকার মায়ের দোয়া ফলভাণ্ডারে ব্যবসায়ী ফিরোজ গাজী বলেন, ‘স্বাভাবিকের চেয়ে ফলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে যে ফলের (১৮ কেজি) কার্টন দুই  হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় কেনা যেত, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও ফলের দাম বেড়েছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। যাঁরা আগে নিয়মিত ফল কিনতেন, তাঁদের অনেকেই এখন আসেন না। যাঁরা কিনছেন, তাঁরাও পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। ’

উত্তর বাড্ডার ভাই ভাই ফলভাণ্ডারের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গত দুই-তিন মাস ধরেই আমদানীকৃত ফলের দাম বাড়তি। এখন পূজার কারণে নতুন করে আরো বেশ কিছু ফলের দাম বেড়েছে। পূজায় আনারের চাহিদা বেশি থাকে, যার কারণে এর দামও অনেক বেড়েছে। বড় সাইজের আনার কেজি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের আনার সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ’

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি ফলের বাজার বাদামতলী। এ বাজারের ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মোল্লা ফ্রেশ ফ্রুটসের মালিক মো. আল-আমিন মোল্লা বলেন, ‘ডলারসংকটে ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসিয়ে আমদানি নিরুৎসাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ফল আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ, যার কারণে বাজারে বিদেশি ফলের সংকট তৈরি হয়েছে। ’

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, ডলারের উচ্চমূল্য, জাহাজ কনটেইনারের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ফল আমদানির খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ’