ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পরনিন্দা’ কেন আমাদের নিত্য চর্চা? – ইনজামাম খান

মুহাম্মদ ইনজামাম খান | সিটিজি পোস্ট
অক্টোবর ৪, ২০২২ ১:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দুই বন্ধু একসাথে বসলাম, আলোচনার বিষয়বস্তু হলো অন্য এক বন্ধুর অপ্রীতিকর কোনো ব্যাপার নিয়ে তুমুল সমালোচনা করা। দুই বাবা-চাচা, ভাই বসলেন আরেক বাবা-আংকেল ও ভাইয়ের সম্পর্কে কঠিন কথা বলার জন্য, কয়েকজন মা-আন্টিরা, বোনরাও একসাথে বসলে পিছিয়ে থাকেননা। এভাবেই চলতে থাকে চক্র৷ এক পর্যায়ে সেই আরেকজনকে নিয়ে বলা ব্যাক্তির সাথে আলোচনায় বসা হয়, তারপর শিকার গতবারের আলোচনাকারী। এভাবে ঘুরেফিরে কেউ ই বাদ পড়েনা এই সমালোচনার হাত থেকে। চক্রে সবারই মান সম্মানের উপর ছুরি কাঁচি চলতে থাকে।

 

এক জনের ব্যাপার অন্যজনের এমন বিরূপ ধারণা আছে জানতে পেরে সবাই দুঃখিত হই, কিন্তু সম্পর্ক নষ্টের ভয়ে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারিনা। ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে আসলেই ভালো থাকা হয়!

 

 

কিন্তু আমরা এমন করি কেনো? না করলেই কি হতোনা? নিজের মুখ ও জিহ্বা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই। সুস্থ স্বাভাবিক আনন্দের চাইতে কুটিল প্রমোদ আমাদের বেশি আকর্ষণ করে। পরিচিতজনদের সাথে ভালো থাকার পরেও আমরা তাদের পেছনের খারাপ কথা বলে বেড়ানোর পেছনে দায়ী আমাদের বাজে চারিত্রিক দোষ গুলো। রাগ, হিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা আমাদের বোধশক্তি, বিবেককে একদম অকেজো করে দেয়। অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু মানবসমাজের কিছু নিত্য ঘটনা ও আলোচনার দিকে আলোকপাত করে দেখি আমার কথার যথার্থতা কতটুকু।

 

 

১. আমাদের সবার অবচেতন মনের মধ্যে কমবেশি সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। নিজের সিদ্ধান্ত সবসময় সঠিক মনে হয়। বন্ধু মহলে অধিকাংশ সময় দ্বন্দ্ব শুরু হয় মতের অমিল থেকে। গুরুত্ব পাওয়াকে কেন্দ্র করে অসন্তুষ্টি ও বিভক্তি দেখা যায়। বিভক্তি ও অসন্তুষ্টি প্রথম অবস্থায় সরাসরি প্রকাশিত হয়না। পরস্পরের অনুপস্থিতিতে সমালোচনার মাধ্যমে রাগের বহিঃপ্রকাশ হয়, পরবর্তীতে যখন এসব সম্পর্কে পরস্পর জানতে পারেন, তখন কুৎসিত ভাবে বন্ধুত্ব সম্পর্কের সমাপ্তি হয়।

 

২. আমাদের আত্মীয় স্বজনদের পরস্পরের শত্রুতা থাকেনা। কিন্তু তবুও দুই আত্মীয় একত্র হলে তৃতীয় আত্মীয় সম্পর্কে বাজে আলোচনা করি। মানুষের মন ভীতু, সহজে কারো উপর তার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেনা, বুকের ভেতর জমা রেখে দেয়। কিন্তু অপরের সাথে আলাপে, মুখ ফসকে আনকনশাস বা মনের অচেতন থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ হয়ে যায়, যা আমাদের সে আত্মীয়ের কোনো সাফল্যের প্রতি হিংসার বা কোনো কাজের প্রতি রাগের বা কোনো দুঃখ দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। অনিচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখা যায়না।

 

আমরা বর্তমানের মানুষরা একদম ই উদার নই। অধিকাংশ সময় আমরা মিথ্যা বিনয়ের চাদরে নিজেদের ঢেকে রাখি। কোনো অপরিচিত দুর্বল হলে সরাসরি ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলি। কিন্তু নিকট কেউ দুর্বল হলেও লজ্জায় তার দোষ সরাসরি প্রকাশ করিনা এবং নিজের চাইতে বেশি ক্ষমতাবানের বিপক্ষে তো অসন্তোষ প্রকাশ সম্ভবই নয় বরং সকল ক্ষোভ পরবর্তী বন্ধুর সাথে আলোচনার জন্য জমা রেখে সেই কাছের মানুষের ও ক্ষমতাশালীর সামনে বিনয়ের অবতার সেজে বসে থাকি।

 

 

আমি নিজেও এসব রোগের উর্ধ্বে নই। আমাদের যার যার ধর্মীয়, সামাজিক অবস্থান থেকে সততা ও সাধনার সাথে উদারতা, অমায়িকতা ও বিনয়ের চর্চা করা উচিত। হিংসা ও রাগ থেকেই সব শুরু। এই দুটো বদভ্যাস এমন বিপদজনক যে পলকেই আমাদের আশেপাশের সুন্দর পৃথিবী ভস্ম করে দিতে পারে।