৪৯তম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আগের দিন ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলায় চট্টগ্রামে একটি স্কুলের ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় নিজের মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষক জাহিদা পারভীন।
শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন শুক্রবার টিবিএসকে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানা জোনে ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাবাডি খেলার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। স্কুলের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য টিম তৈরি তার দায়িত্ব। অংশগ্রহণের নিয়ম অনুযায়ী খেলার এক দিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তোলে কো-অর্ডিনেটরকে জমা দিতে হয়।
তিনি বলেন, “ওই দিন (৭ সেপ্টেম্বর) ছাত্রীদের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলি। তারা বেণী করে জার্সি পরে তৈরি হয়। এরপরই প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী ছাত্রীদের বকাঝকা করেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেন। দুই মেয়েকে কান্না করতে দেখি।”
“তখন আমি প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমি ছাত্রীদের বেণী করতে বলেছি। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন,” বলেন তিনি।
জাহিদা আরো অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকার কারণে পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর ম্যাচে অংশ নিতে দেরি হয়। এতে প্রতিপক্ষ ওয়াকওভার পেয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “ওই দিন মডেল টেস্ট ছিল। প্রধান শিক্ষিকা পরীক্ষা শেষ করে খেলতে যেতে বলেছিলেন। মাঠে রিপোর্টিং করার কথা ছিল সকাল নয়টায়। কিন্তু মাঠে পৌঁছাতে ৩৫ মিনিট দেরি হয়। গিয়ে শুনি প্রতিপক্ষ দল ওয়াকওভার পেয়ে গেছে। যদিও আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম দেরি হওয়ার কথা।”
শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর মাথা ন্যাড়া করেন বলে জানান জাহিদা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও লিখেছেন।
জাহিদা পারভীনের অভিযোগ, তিনি স্বাধীনভাবে মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে পারেন না। খেলার জন্য মেয়েদের নিয়ে কোনো টিম করতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। স্কাউট করতেও দেওয়া হয় না। কখনো মেয়েদের নিয়ে স্কুলের বাইরে যেতে পারেন না তিনি।
এই শিক্ষিকা আরো জানান, চুল ন্যাড়া করার পর তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বারবার হুমকি দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। মাথা ন্যাড়া করার কারণে জোর করে তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী বলেন, “ছাত্রীদেরকে বকাবকি বা মারধর করিনি। তাদের সঙ্গে আমি স্বাভাবিকভাবে ছবি তুলেছি। ছবি তোলার আগে তাদের বলেছিলাম, এভাবে (ফ্রেঞ্চ স্টাইলে) বেণী করলে তো হবে না। স্কুলে সবসময় যে বেণী করে আসো, সেভাবে করো। শুধু এটুকু বলেছি। এখানে মারামারি বা বকাঝকার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
পরীক্ষা শেষে ম্যাচে যেতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষা দিতে আমি ছাত্রীদের বাধ্য করিনি। আমি শিক্ষিকাকে (জাহিদাকে) বলেছিলাম মডেল টেস্ট না দিলে কিছু হবে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, ছাত্রীরা পরীক্ষা দিক, তিনি কো-অর্ডিনেটরকে বলে রেখেছেন যেতে কিছুটা দেরি হবে।”
জাহিদার পদত্যাগের বিষয়ে নিপা চৌধুরী বলেন, তাকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।
“বরং তিনি শিক্ষাদানের যোগ্য নন উল্লেখ করে আরও সাত-আটদিন আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাকে স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। স্কুলে সিসিটিভির ফুটেজ আছে, তাতে সব কিছু আছে,” যোগ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে কোতোয়ালি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী বলেন, “ম্যাচের দিন ছাত্রীদের আসতে দেরি হবে— বিষয়টি আমাকে জাহিদা পারভীন আগে জানাননি। এমনকি ছাত্রীদের খেলতে না দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানাননি। বরং তিনি নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর খেলার মাঠে পৌঁছেছেন বলে জানতে পেরেছি।”
জাহিদা পারভীনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। কাউকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।”