ঢাকাশুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে উঠার কারণ কি? 

ইনজামাম খান | সিটিজি পোস্ট
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ ৫:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বর্তমানে সারাবিশ্বে অন্যতম একটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠা সমস্যা হলো কিশোর-কিশোরীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। উঠতি বয়সের বয়সের ছেলেমেয়েদের এধরণের আচরণ থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু যুগের পরিবর্তনে ঔদ্ধত্য আচরণের প্রভাব এতো বেড়েছে যে তা আর স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। উগ্র ও ঔদ্ধত্য আচরণ শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায়।

 

কিশোর -কিশোরীদের মাঝে এধরনের স্বভাব গড়ে উঠার পেছনে পরিবার ও সমাজ বিশাল অংশে দায়ী। এ সমস্যা সৃষ্টি হয় যখন একজন তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পারিবারিক, সাংসারিক ও সামাজিক কলহ উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীদের অশান্তি ও বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার নামে, সঠিক পন্থা প্রদর্শনের বিজ্ঞাপন করে, ধর্মকে কেন্দ্র করে তর্ক – দাঙ্গা কিশোর কিশোরীদের মনে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় যে, এসব যদি সঠিক ই হয় তাহলে কেনো তা প্রতিষ্ঠা করতে এতো অশান্তি। তারা যখন বিভ্রান্ত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে, তখন তাদের মায়া-মমতার সাথে শুধরে দেয়ার কেউ তো থাকেই না বরং বল প্রয়োগ করে তাদের শেখানোর বৃথা চেষ্টা করা হয়।

 

অসুস্থ বিনোদনের প্রসার ও বিভিন্ন অপসংস্কৃতির বিস্তার পরিবারের গঠনে আঘাত হানছে। করোনা মহামারীকালে পুরো বিশ্ব ঘরের চারদেয়ালে আটকে গিয়েছিলো। শিশু থেকে শুরু করে, কিশোর- কিশোরী সবার সবচাইতে কাছের জগৎ ছিলো ইন্টারনেটের জগৎ। যে জগতে সবকিছুই ধরা-ছোঁয়া যায়, থাকেনা কোনো নির্দেশক ও বাধা। জগতের বাইনারি সিস্টেম- ভালো/খারাপ, উচিত/অনুচিত শব্দযুগলের মাঝের বিকল্প চিহ্ন বা স্ল্যাশ বিলীন হয়ে যায়, ভালো খারাপ মিশে হয় এক। সেই নির্দেশক স্ল্যাশ হলো আমাদের নৈতিক শিক্ষা, যা আমাদের পার্থক্য করতে শেখায়। এবং তা আসে পরিবার থেকে। কিন্তু পরিবারের অভিভাবকদের উদাসীনতা সন্তানদের সঠিক ও নৈতিক শিক্ষাদানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু সহজে লাভ করে আসা কিশোর কিশোরীরা যখন হঠাৎ সীমাবদ্ধতার সাথে সাক্ষাৎ করেছে তখনই তাদের মনের আবেগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, না পাওয়ার সাথে অভস্ত্যতা না থাকায় তাদের মন প্রতিবাদী হয়ে উঠছে এবং প্রকাশ পাচ্ছে রাগ হিসেবে যা আমাদের ভাষায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ।

 

এ সমস্যা সংক্রামক ও বটে। কোনোপ্রকার সমস্যার মুখোমুখি না হওয়া একজন কিশোর বা কিশোরী এধরনের স্বভাব লাভ করতে পারে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বহন করে চলা বন্ধু বা সহপাঠীদের সংস্পর্শে। ছোট্ট শিশুদের বর্তমানে খুব সহজেই রেগে যেতে দেখা যায়। রেগে যাওয়ার শিক্ষাটা তারা লাভ করে অধিকাংশ সময় তাদের অভিভাবকের সাংসারিক কলহ থেকে। সেই নতুন শিক্ষা তারা প্রয়োগ করে তাদের বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের উপর, জল গড়িয়ে যায় শিক্ষক পর্যন্ত, অধিকাংশ সময় শিক্ষক সঠিক পথ প্রদর্শন না করে, শাস্তি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। শাস্তি পদ্ধতি সাময়িকভাবে সে শিশুদের থামালেও, তাদের মনে বড় ক্ষত তৈরী করে, যা অবচেতন মনের আগ্নেয়গিরি থেকে পরবর্তীতে দ্বিগুণবেগে বিস্ফোরিত হতে থাকে। অথচ শিক্ষক মায়ামমতার সাথে একটু সময় নিয়ে ভালো- মন্দের শিক্ষা দিলেই, তাৎক্ষণিক ফলাফল না আসলেও ধীরে ধীরে চিরস্থায়ী ইতিবাচক ফলাফল আসে।

 

ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণগত বৈশিষ্ট্যের যারা মালিক, তাদের কারো দৃষ্টিকোণ থেকে এই আচরণ অনেকটা তাদের দুঃসাহসের প্রতীক, আবার কারো নিকট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়া আবেগ। এই প্রকট সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হলো সঠিক কাউন্সেলিং। পরিশুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে অভিভাবকশ্রেনী থেকেই। অভিভাবকগণ সঠিক পথ খুঁজে পেলে সন্তানরাও তাদের অনুসরণ করবে।