এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে পরাজয়ের পর বাংলাদেশ দলে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি। তারপরও শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে দলটির অধিনায়ক শানাকার মন্তব্যের জবাব চলছিল একের পর এক। মিরাজের কথাকে ভুল প্রমাণ করে শেষ চারে উঠলো লঙ্কানরা। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় সর্বনাশ বাংলাদেশের! ২ উইকেটের জয় লঙ্কানদের, এশিয়া কাপ শেষ বাংলাদেশের!
মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৮), আফিফ হোসেন (৩৮), সাকিব আল হাসান (২৪), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৭) ও মোসাদ্দেক হোসেনের (২৪*) দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৮৩ রান করে বাংলাদেশ। এরপর একাধিক জীবন পেয়ে কুশাল মেন্ডিস ৬০ ও অধিনায়ক দাসুন শানাকার ৪৫ রানের ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারেই জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
১৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই টাইগার বোলারদের ওপর চওড়া হয় দুই লঙ্কান ব্যাটার পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিস। যদিও কুশলের সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন মুশফিক। তবে উদ্বোধনী জুটি বড় হতে দেননি পেসার এবাদত। নিশাঙ্কাকে ২০ রানে ফেরানোর ঐই একই ওভারেই আসালাঙ্কাকে ফেরান এই পেসার। এর ঠিক দুই ওভার না যেতেই লঙ্কান শিবিরে আবারো এবাদতের আঘাত। এবার ফেরান গুনাথিলাকাকে।
যদিও ৪ বার জীবন পাওয়া কুশল মেন্ডিস একপ্রান্ত আগলে রেখে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। তবে পঞ্চমবারে এসে আর রক্ষা মেলেনি এই ব্যাটারের। তাসকিনের শিকার হয় ৬০ রান করে মাঠ ছাড়েন কুশল। এরপর শানাকার ব্যাট চওড়া হলেও লঙ্কানদের শেষ রক্ষা হয়ে উঠেনি। শেষদিকে করুনারত্নের ছোট ক্যামিও পর আশিতার ৩ বলে ১০ রানে ভর করে ২ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লঙ্কানরা। ফলে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলো টাইগাররা। এদিন দলের হয়ে এবাদত নেন ৩ উইকেট, তাসকিনের শিকার ২ উইকেট। মাহেদি এবং মুস্তাফিজ ১ করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অঘোষিত নকআউট এই ম্যাচে দারুণ এক পুঁজিই পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৭ উইকেট খুইয়ে তুলেছে ১৮৩ রান। তাতে লঙ্কানদের সামনে চ্যালেঞ্জটা দাঁড়াল ১৮৪ রানের।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মাটিতে আগে ব্যাট করে জেতার কীর্তি অন্তত শেষ এক বছরে খুব বেশি নেই। তাই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চাইছিলেন টস জিতে ফিল্ডিং করতেই। তবে টস হেরে সে চাওয়া আর পূরণ হয়নি তার। শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশকে।
ওপেনিং বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ বহুদিন ধরেই। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে আজ লাল সবুজের প্রতিনিধিরা ওপেন করতে পাঠায় মেহেদি হাসান মিরাজ আর সাব্বির রহমানকে। আশা জাগানিয়া শুরুর পরও ওপেনিং জুটি বড় হয়নি, ১৯ রানেই বিদায় নেন সাব্বির রহমান।
তবে মিরাজকে শুরুতে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা দারুণভাবেই কাজে লেগে গেছে বাংলাদেশের জন্য। সাব্বিরের বিদায়ের পর রান তোলার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি। তার ব্যাটে চড়েই মূলত পাওয়ার প্লে শেষে ৫৫ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া মিরাজ অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২৬ বলে ৩৮ রান তুলে তিনি বিদায় নেন পরের ওভারেই।
এরপর মুশফিক এসে ১৫০০ টি-টোয়েন্টি রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন, তবে ফেরেন এরপরই। সাকিব আল হাসানও রানের গতি বাড়ানোর তাগিদে ফেরেন ২২ বলে ২৪ রান তুলে। ৮৭ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ খানিকটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল।
৩১ বলে ৫৭ রান তুলে সেই চাপটা দূর করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আফিফ হোসেনের জুটি। ২২ বল খেলে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলে আফিফ ফেরেন এরপর। এর দুই বল পরই মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ২৭ রান করে ফিরলে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এবার বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৯ বলে ৪ চারের মারে তিনি খেলেন ২৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। শেষে সঙ্গী হিসেবে পান তাসকিন আহমেদকে, মোসাদ্দেকের সঙ্গে তার ৬ বলে এক ছক্কায় খেলা ১১ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে ভর করে ১৮৩ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি দাঁড় করিয়ে ফেলে বাংলাদেশ! কিন্তু ম্যাচটা জেতা হলো না! আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে সাকিব আল হাসানদের।