ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন আ.লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলেও

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ২৭, ২০২২ ৪:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকরাও প্রশ্ন তুলেছেন এর ব্যবহার নিয়ে। ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে কথা বলছেন মহাজোটের শরিক ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলও।

 

চলতি বছরের জুন মাসে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ইভিএম নিয়ে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনে। ওই আমন্ত্রণে বিএনপিসহ ১১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়নি। আমন্ত্রণে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চেয়েছিল। কিছু আপত্তি সত্ত্বেও ইভিএমের পক্ষে মত দেয় তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিএনএফ, জাকের পার্টি ও এনপিপি।

 

গত বুধবার ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন প্রকার সংশয় ও ইভিএম পদ্ধতিকে ত্রুটিমুক্ত করার প্রস্তাবসমূহকে আমলে না নিয়ে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ইভিএম ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিতান্তই হতাশাব্যঞ্জক। বস্তুত এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন হুদা কমিশনের সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখল। এর জন্য ঘটা করে সংলাপের প্রয়োজন ছিল না।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সপক্ষে থাকার পরও ইভিএম সম্পর্কে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতে যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল যথা- ইভিএমএ ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিত্তিপ্যাড) সংযুক্ত করা, যাতে ভোটার তার ভোটটি সঠিকভাবে দেয়া হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে।

 

১৪-দলীয় জোটের শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ইভিএম প্রয়োগ করার বিষয়ে আমাদের সমর্থন আছে। ৮০৭টি নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে ইভিএম প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে, সেই ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো সংশোধন সাপেক্ষে ইভিএম প্রয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া বাঞ্ছনীয়।’

 

নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাকে (১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করবেন না। বরং এই ত্রুটিগুলো সংশোধন করার ক্ষমতা আছে। ত্রুটিগুলো সংশোধন করার ওপর জোর দিয়ে ঘোষণা দেবেন এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।’

 

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যদি ৩০০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রযুক্তি ব্যবহার করা ভালো। কিন্তু তা যদি না হয় তা হলে ইভিএম ব্যবহার করাটা ঠিক হবে না।’

 

জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম প্রধান ইস্যু না হলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত মতামত ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত সংলাপে অধিকাংশ দলের বিরোধিতার পরও আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত একেবারেই অবাঞ্ছিত ও অপ্রত্যাশিত।

 

এদিকে মহাজোটের শরিক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধী। দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্তে নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এখনো দেশের নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষ প্রার্থীর নাম পড়তে পারে না।’

 

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়ার কারণ তুলে ধরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএমে ভোট হয়েছে। আওয়ামী লীগ জালিয়াতিমুক্ত, কারচুপিমুক্ত নির্বাচন চায়। সিল মারামারি নির্বাচন চায় না, সে জন্যই ইভিএম চায়।