প্রতিপক্ষের উপর হামলার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই কর্মীকে পিটুনির দায় স্বীকার করার পাশাপাশি ক্ষমা চেয়ে ছাত্রলীগের ছয় কর্মী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা আর কখনও হবে না।
যারা ক্ষমা চেয়েছেন, তারা বলেছেন, যে হামলা হয়েছে, সেটার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। তারা ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এই কাজ করেছেন যার দায় সংগঠনের নয়।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলায় সন্দেহভাজন ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে একজন ভুক্তভোগী দুইজন প্রতিনিধির কাছে ক্ষমা চান।
সে সময় অন্য সন্দেহভাজনরাও উপস্থিত ছিলেন।
ছয় ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিল তুষার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হেদায়েত উল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইত্তেজা হোসেন রাকীব, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসরুর রুদ্র, ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগের সুমন আলী ও রোকনুজ্জামান রোকন।
এদের মধ্যে তুষার এবং হেদায়েত ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আর বাকিরা ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
রোকন ছাড়া বাকি সবাই কবি জসিম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের কর্মী। রোকন এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের কর্মী।
ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন এবং স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (স্যাট) প্ল্যাটফর্মের প্রচার সম্পাদক আনাস বিন মনির উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে কথা বলেন কবি জসিম উদ্দীন হল ছাত্রলীগ কর্মী ইত্তেজা হোসেন রাকিব।
সেদিনের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের বন্ধু মারুফকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলে মারুফকে মারা হচ্ছে। এ জন্য আমরা সেখানে গেছি। ভুল-বোঝাবুঝির কারণে ওনাদের ওপর হামলা করি। আমরা এটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এ রকম হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এর দায় সম্পূর্ণ আমাদের, ছাত্রলীগের নয়। ছাত্রলীগ থেকে আমাদের আদেশ করা হয়নি, আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে এসেছি।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ‘এটি একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং ক্ষমা চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ কোনো প্রতিশোধপরায়ন সংগঠন না। যারা হামলা করেছে তারাও আমাদের ভাই। আমরা তাদের মাফ করে দিয়েছি। আশা করছি ভবিষ্যতে তারা তো নয় বরং কোনো ছাত্রলীগ কর্মী ক্যাম্পাসের কোনো শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন করবে না।’
স্টুডেন্টস্ অ্যাগেইনস্ট টর্চার (স্যাট) প্ল্যাটফর্মের পক্ষে আনাস বিন মনির বলেন, ‘আমাদের দুইজনকে মারধরের ঘটনায় আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে অভিযুক্তরা এটি নিয়ে সমঝোতায় আসতে চেয়েছে। তারা এটি নিয়ে অনুতপ্ত। তাই আমরা মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি।’