ঢাকারবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মিরসরাই ট্রেন দুর্ঘটনা: মাইক্রোবাস চালক-গেটম্যানকে দায়ী করে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ১৭, ২০২২ ৭:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের মিরসরাই বড়তকিয়া স্টেশন এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সাথে মাইক্রোবাসের ধাক্কার ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফার দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। 

এই রিপোর্ট জমা দেয়ার বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করেছেন ডিআরএম আবুল কালাম চৌধুরী।

পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। অপর কমিটির তদন্ত রিপোর্টও জমা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য দু’জনকে দায়ী করা হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীর কাছে ছয় পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন। মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন বর্তমানে কারাগারে আছেন।

গত ২৯ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী আন্তঃনগর ট্রেন মিরসরাই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রেললাইনের উপর থাকা পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনায় ট্রেনটি মাইক্রোবাসকে অন্তত এক কিলোমিটার নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান ১১ জন ও পরে দুই জনের মৃত্যু হয়। আহত বাকি ৫ জন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত ১৪ আগস্ট তদন্ত কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করে স্বাক্ষর করেছেন। প্রতিবেদনে ব্যারিয়ার ফেললেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার জন্য গেটম্যানকে শাস্তির আওতায় আনতে সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রেন যাওয়ার আগে গেটম্যান দুই পাশের ব্যারিয়ার ফেলেছিল। কিন্তু কেউ না কেউ একটি ব্যারিয়ার উঠিয়ে ফেললে মাইক্রোবাসটি ক্রসিং পার হয়ে যায়। কিন্তু অপর প্রান্তের ব্যারিয়ার নামানো থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে রেল ক্রসিং পার হতে পারেনি। গেটম্যান ব্যারিয়ার ফেলে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য গেলেও অতীতে কাজে ফাঁকি দেয়ার কোনো অভিযোগ ছিল না তার বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় ভিউ ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী অন্তত ৬০০ থেকে ৮০০ মিটার দূরবর্তী স্থান থেকে একটি ট্রেনকে দেখতে পাওয়ার কথা। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় বিভিন্ন সতর্কতামূলক নির্দেশিকা প্রতিপালন, রেলওয়ের সতর্কতা এলার্ম শুনে পাড়াপাড় কিংবা ট্রেনের হুইসেল শুনে ক্রসিং পার হওয়ার নিয়ম রয়েছে। তাছাড়া একটি মাইক্রোবাসে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ভ্রমণ সম্ভব হলেও ওই মাইক্রোবাসে চালক-হেলপার সহ ১৮ জন যাত্রী ছিল। যার কারণে মাইক্রোবাসের অভ্যন্তরে উচ্চস্বরে গান বাজানো, হইহুল্লোর সহ মোটরযান আইন মেনে না চলায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় গেটম্যানের চেয়েও মাইক্রোবাস চালকের দায় সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানা গেছে, ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতরা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজারের পূর্ব খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ১৩ জনের মধ্যে গাড়িচালক ছাড়া অন্যরা স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ঘটনার দিন সকালে তারা মাইক্রোবাসে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে যান। দুপুরে সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। দুর্ঘটনার পর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এ ঘটনার তদন্তে চার ও পাঁচ সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। একটি তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরমান হোসেনকে। অপর কমিটির প্রধান করা হয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও-অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনসার আলীকে। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও অন্য কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিআরএম মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি ১৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালক উভয়কেই দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন করা হলেই কমিটির দেয়া সুপারিশনগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।

তবে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালককে দায়ী করা হলেও মাইক্রোবাস চালক নিহত হয়েছে। অপর দিকে দুর্ঘটনাস্থলের লেভেল ক্রসিং গেটের গেটম্যান রেলওয়ের নিজস্ব কর্মী নয়। মূলত প্রকল্পের অধীনে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল গেটম্যানকে। এক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে চাকরিচ্যুত করা ছাড়া আর কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন তিনি।