যদি আমরা বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আমরা খুব সহজেই একটা বিষয় দেখি। ম্যাক্সিমাম অর্থাৎ বেশিরভাগ নেতার যাবতীয় অর্জন তার ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।
তিতুমীর স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন ৪৯ বছর বয়সে।
সূর্য সেনের ফাঁসি হয় ৪১ বছর বয়সে। মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার জন্মভূমির মুক্তির জন্য আত্মাহুতি দেন। জনগণের নেতা হওয়ার জন্য ৭০-৮০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
একটু ইতিহাস দেখে আসি চলুন।
ভারতীয় উপমহাদেশের শীর্ষ নেতা মহাত্মা গান্ধী ২৫ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে অহিংস আন্দোলনের সূচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার ৫১ বছর বয়সে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের টনক নড়িয়ে দেন। পাকিস্তান আন্দোলনের প্রধান নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ৪৭ বছর বয়সে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মহারাষ্ট্রে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে বোম্বে (মুম্বাই) থেকে তাঁর বিরুদ্ধে যে দুজন দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
স্বাধীন ভারতের জওহরলাল নেহরু ৪০ বছর বয়সেই ভারতের একজন প্রধান নেতা এবং ৫৬ বছরে প্রধানমন্ত্রী হন।
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক সুভাষচন্দ্র বসু ৪১ বছর বয়সে নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন, ‘নেতাজি’ উপাধি দেয় দেশবাসী এবং ৪৫ বছর বয়সে তাঁকে সম্বোধন করা হয় ‘রাষ্ট্রপতি’। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেন ‘দেশনায়ক’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৪ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রী হয়েছিলেন ৩৬ বছর বয়সে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন ৫২ বছর বয়সে। তার অন্যতম সহযোগী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ ২৯ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন ৪৬ বছর বয়সে।
বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ৪১ বছর বয়সে রাষ্ট্রপতি হন।
আজকে ২০২২ সালে এসে সারাবিশ্বে যেখানে তারুণ্যের জয়গান গাওয়া হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব আসছে সেখানে বাংলাদেশে দেখছি উল্টা চিত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তারুণ্য নির্বাসিত। সব দলেই বুড়োরা নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখতে চান।
একটা বিষয় লেখার মাঝে মাথায় আসলো আমি একজন তরুণ। আমার বয়স ২৩ বছর। আমার একটা প্রশ্ন বারবার মাথায় আসে আমরা যারা বাংলাদেশের তরুণ তাদের কি মেধা ও যোগ্যতার এতই অভাব? মোটেই বিশ্বাস করি না। আজ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। যদিও বিশ্ব রাজনীতি ও যুদ্ধের কারণে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে তারপর ও প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক। আমাদের অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই তরুণ। সফল উদ্যোক্তাদের অনেকেরই বয়স ৩৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে। রাজনীতিতে তারুণ্যের অনুপস্থিতি কেন? তাহলে কি রাজনীতি করার যোগ্যতা তরুণেরা হারিয়ে ফেলেছেন? নাকি রাজনীতির ওপর তাঁরা আস্থা হারিয়েছেন? এর কোনোটাই সত্য নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের ছাত্র-যুব সংগঠনে বহু মেধাবী তরুণ রয়েছেন এবং গত ৩০ বছরে তেমন তরুণ নেতা অনেকে ছিলেন। তাঁরা কোথায় গেলেন?
এবার তাহলে আসল কথায় আসি যখনই কারও ভেতরে সুক্ষ নেতৃত্বর সম্ভাবনা দেখছেন আমাদের “রাজ নেতারা” সম্ভাবনা দেখা গেছে, তখনই তাঁকে সুকৌশলে সরিয়ে দিয়েছেন নিজেদের নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে। রাজনীতি থেকে তারুণ্যকে সুপরিকল্পিতভাবে মাইনাস করা হয়েছে এবং এখনো প্রতিনিয়ত তা কিন্তু হচ্ছে। দেশের দায়িত্ব থেকে তাঁদের দূরে রাখা হয়েছে। তাঁদের উপহার দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেল। রাম দা, চাপাতি আর হেলমেট। নেতারা যাবেন এসি গাড়িতে। তাঁদের সামনে–পেছনে তরুণেরা ছুটবেন রোদের মধ্যে।
একটা সহজ কথা আজ বলি দেশের ভবিষ্যৎ কিন্তু তরুণদের; বৃদ্ধদের নয়। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমাদের বড় বড় চিন্তাশীলদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।
আমি একজন বাংলাদেশী তরুণ নাগরিক। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন এই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক কোনো জাতীয়তাবাদী প্রগতিপন্থী নেতা। যে দেশকে ভালোবাসবে। যে নেতা মধ্যে স্বপ্ন থাকবে সাহস থাকবে, লক্ষ্য থাকবে এবং সেই স্বপ্ন, সাহস ও লক্ষ্য দিয়ে একটা বাংলাদেশ তৈরি করবে।
তবে তার মানে এই না যে বৃদ্ধদের আমরা অশ্রদ্ধা করছি, অপমান করছি। তারা থাকবেন আমাদের ছায়া হয়ে। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিয়ে তরুণদের সফল হতে সাহায্য করবেন। তাঁরা থাকবেন শ্রদ্ধার আসনে।
এটাই আশা। একদিন তরুণদের হাতে যাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শক্তি। তথাকথিত চেতনার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের তরুণরাই এই দেশকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিবে।
বাঙ্গালী অবাঙালি পাহাড়ি উপজাতি সকল ধর্মের মানুষ সেদিন গর্ব করে বলবে “হ্যা আমরা বাংলাদেশী”