আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি আরও ১ শতাংশ পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। অর্থাৎ চীনের বাজারে বাংলাদেশ ৯৯ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে।
রোববার (৭ আগস্ট) ঢাকা সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর। দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে চীন আরও ১ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ এখন থেকে চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চীন আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও অতিরিক্ত ১ শতাংশে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দেবে। এই অতিরিক্ত ১ শতাংশের মধ্যে আমি মনে করি, বাংলাদেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস ও ওভেন প্রোডাক্টসে কিছু লিমিটেশন ছিল। আরও বেশি কিছু প্রোডাক্টে লিমিটেশন ছিল। আমরা বিকেল নাগাদ তালিকাটা হাতে পাব।
তিনি বলেন, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর দূতাবাসে ফিরে গেলে তালিকাটা প্রেসকে দেবে বলেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের এই এক্সট্রা ১ শতাংশ পণ্য ও সেবায় বাংলাদেশ থেকে চীন ডিউটি ফ্রি প্রবেশের সুযোগ দেবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- সামনের দিনে জয়েন্ট ফিজিবিলিটি ফর পসিবল প্রায়োরিটি বিজনেস বা ট্যারিফ চুক্তি এটা নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে সম্মতি আছে। বাংলাদেশের ইকোনমিক জোনে বিশেষ করে আনোয়ারাতে যে চাইনিজ ইকোনমিক জোন তৈরি হচ্ছে, সেখানে অধিক পরিমাণ চীনা কারখানা, প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে তারা সহায়তা করবেন।
আগামীতে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে একটা পিপিপি কো-অপারেশন এমওইউ সই করতে চায় বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বৈঠকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি তাড়াতাড়ি চালুর জন্য আমাদের তাগাদা দিয়েছেন চীন। বাংলাদেশের তরফ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ বিমান চীনে সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে, এটাকে স্বাগত জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এফডিআই বাড়ানোর জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এটা বাংলাদেশের তরফ থেকে, শেখ হাসিনা সরকারের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমাদের বাণিজ্যিক ভারসাম্য কমিয়ে আনা প্রয়োজন, এটা একটা বড় ইস্যু।
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতি সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। মোমেন-ওয়াং ই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো কারণে শুধু বাংলাদেশ না, অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুটি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুব জোরালোভাবে বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটাতে চীনের সহযোগিতার প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধানে তারা বলেছে, সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
আজ সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর একটি হোটেলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ড. মোমেন ও ঢাকা সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে এক ঘণ্টা চলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বাকি আধঘণ্টায় সমঝোতা স্মারক সইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দুদিনের সফরে শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেল ৫টায় ঢাকায় আসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বিমানবন্দর থেকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরের প্রথম কর্মসূচিতে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সবশেষ, ২০১৭ সালের নভেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করেছিলেন।