অর্থনীতির অর্থনৈতিক লেনদেন, উত্থান পতনের সমীকরণ ও হার, এধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আমার স্বচ্ছ ধারণা নেই। তবে একজন সাধারণ জনতা হিসেবে সাম্প্রতিককালের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা অনুভব করতে তেমন একটা সমীকরণ জানার প্রয়োজন নেই।
আমার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ে,সর্বদা উপস্থিত থাকা দুটি মূল্যবান পণ্য হলো গুঁড়া দুধ ও সয়াবিন তেল। চায়ের সাথে যেমন গুঁড়া দুধ ছাড়া আমার জমেনা, ঠিক তেমন তেল ছাড়া তরকারি মনে হয় পানসে! করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব কমতেই বাড়তে শুরু করলো পণ্যের দাম। আমি সর্বপ্রথম অনুভব করলাম গুঁড়া দুধ ও সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে। মার্কস থেকে নেমে এলাম স্টারশিপে, ঘুরতে থাকলাম পিউর, স্টারশিপ ও ডানো পুষ্টির মাঝে। শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ালো ডানো পুষ্টি, যদিও তা দুধবিহীন গুঁড়া দুধ! সামর্থ্যের ভেতর সবচাইতে কমদামী। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের দাম দ্রুত ৫, ১০, ৫০ টাকা করে বাড়তে লাগলো। এই দাম বৃদ্ধির মিছিল থেকে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বাদ গেলোনা।
আমাদের পণ্য বেশিদাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে, খরচ বেড়ে যাচ্ছে, রিকশাওয়ালা ও ট্যাক্সিওয়ালাসহ নানা পেশার মানুষেরও একই। অথচ রিকশাওয়ালা ও ট্যাক্সিওয়ালাদের ভাড়া বাড়িয়ে বলাটা আমরা মেনে নিতে পারিনা! গোলপাহাড় থেকে মির্জারপুল বাসায় আসতে লাগতো ৩০ টাকা,রিকশায়। একদিন রিকশাওয়ালা ভাই ৪০ টাকা চেয়ে বসলে চমকে যাই, পরে বেচারার দিকটা চিন্তা করে আফসোস লাগে। আমিও আমার সামর্থ্যের বাইরে যেতে পারি না, অগত্যা তিন নাম্বার বাসে গাদাগাদি করে চলে গেলাম মির্জারপুল। তেলের দাম বাড়তে থাকলে ডিজেল চালিত যানের ভাড়াও বাড়তে লাগলো, তখন সামর্থ্য নেমে এলো সিএনজি ও এলপিজি চালিত যানবাহনে।গ্যাসের দাম ও বেড়ে গেলো পরবর্তীতে, যদিও গ্যাসচালিত যানবাহনের ভাড়া এখনো সবদিকে বাড়েনি, তবে এই ক্ষীণকায় সুখ বেশিদিন স্থায়ী হবেনা তা সুনিশ্চিত।
বাড়তি দামে আমরা অভ্যস্ত হয়ে এলাম।কিন্তু স্বস্তি নেই, রাঘববোয়ালদের ধস্তাধস্তি চলমান, আমেরিকা-রাশিয়া-চীন কেউ কারো শান্তি চায় না, মহামারীর দুরবস্থায় বিশ্বরাজনীতির মাঠে তাদের দাপাদাপি যেমন ছিলো, এখন ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ফের।
আমরা চুনোপুঁটিরা আলোচনা করি, ভাবি এদের দাপাদাপিতে আমাদের কি! সমালোচনা হয়, লেখালেখি হয়, গবেষণা হয়, ফলাফল পাওয়া যায়- ‘আমাদের প্রাণ বাঁচলেই হলো’। কিন্তু চুনোপুঁটিরা বুঝতে পারেনা রাঘববোয়ালদের ধস্তাধস্তিতে জল ঘোলা হয়, পথ ঝাপসা হয়ে যায়।এর প্রভাবে চুনোপুঁটিদের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে আসে, ধীরে ধীরে, তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের সাথে!
আমরা নিম্ন মধ্যবিত্তরা চালিয়ে নিয়ে যাই জীবন, এদিক ওদিক করে। কিন্তু স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকেদের ভোগান্তি দুর্বিষহ। ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, বাড়ছে রাজনৈতিক চাপ, দেশের জনগণ অস্থিরতায় দিনযাপন করছে শ্রীলঙ্কার দৈন্যদশার ভীতি থেকে। কিন্তু সমাধান নেই, প্রতিকার নেই। রাঘববোয়ালদের চুনোপুঁটিদের নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমরা চুনোপুঁটিদের টিকে থাকার একমাত্র পথ বাকি রইলো সব ক্ষেত্রে অপচয় রোধ করে, কৃচ্ছতা সাধন করে চলা।