ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্ব বাঘ দিবসঃ সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুলাই ২৯, ২০২২ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত, এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা নেই কারও। বন বিভাগের তথ্য বলছে, সর্বশেষ জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪। পরে অন্তত ৮টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। সেই হিসাবে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬। কিন্তু সর্বশেষ জরিপের পর এই বনে কতটি বাঘ জন্ম নিয়েছে, সে তথ্য না থাকায় ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’-এর সঠিক সংখ্যা অজানাই থেকে গেল।

আজ ২৯ জুলাই, বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশে এবার নানা আয়োজনে বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। বাঘের অন্যতম আবাসস্থল সুন্দরবনের কোলঘেঁষা জেলা বাগেরহাটেও দিবসটি উপলক্ষে বন বিভাগ নানা আয়োজন রেখেছে। বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘপ্রেমীদের আশার আলো দেখাচ্ছে সুন্দরবন। করোনাকালে দীর্ঘদিন বনে মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকা এবং সচেতনতামূলক নানা উদ্যোগে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া ও বাঘের দেখা পাওয়াকে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
গত ১২ মার্চ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা খালে একসঙ্গে চারটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন পর্যটকেরা। তখন দর্শনার্থীদের দেখা এই বাঘের দৃশ্য ভাইরালও হয়েছিল। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বনরক্ষীরা কটকা এলাকায় একসঙ্গে তিনটি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় শরণখোলা ও মোংলার লোকালয়ে বাঘ আশার খবর রয়েছে বন বিভাগের কাছে।

শরণখোলা উপজেলার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) লিডার আলম হাওলাদার বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে বেশ কয়েকবার সুন্দরবনের বাঘ শরণখোলার লোকালয়ে এসেছে। আগে কখনো এতবার বাঘ আসার কথা শোনা যায়নি। সুন্দরবনে আমরাও কয়েকবার বাঘ দেখেছি। বাঘের বাচ্চাও দেখেছি কটকা এলাকায়।’

শরণখোলার বনজীবী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে যাই, কিন্তু তেমন একটা বাঘের দেখা পাইনি। কিন্তু গত বছর শরণখোলা রেঞ্জের চাপড়াখালি, সুপতি ও আলী বান্দা এলাকায় আমি বাঘ দেখেছি। বাচ্চাসহ বাঘও দেখেছি তখন। আগে কখনো এত অল্প সময়ে কয়েকবার বাঘ দেখিনি। এ ছাড়া বাঘের গর্জনও শুনেছি কয়েকবার।’

বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে টহল জোরদার করেছি, যার ফলে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা কমেছে। করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন সুন্দরবনে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠেছে। ওই সময়ে বাঘেরাও ইচ্ছেমতো বনের মধ্যে বিচরণ করেছে। তখন কয়েকবার বনরক্ষীরা বাঘ দেখেছেন। করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকবার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ ও বাঘের বাচ্চা দেখেছেন বনরক্ষী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা। এসব কারণে আমরা মনে করছি, সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’

২০০৪ সালে জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ ছিল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে এ সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে মাত্র ১১৪টিতে দাঁড়ায়। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে অন্তত ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৮টি বাঘের, বিভিন্ন সময় দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১৩টি, লোকালয়ে আসায় জনগণের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৫টি বাঘের এবং ২০০৭ সালে ভয়ংকর সিডরে মৃত্যু হয়েছে ১টি বাঘের। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় চোরা শিকারি কর্তৃক মেরে ফেলা ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ‘সর্বশেষ গণনায় সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ ছিল। এ বছরের শেষের দিকে আবারও বাঘ গণনা করা হবে। আমরা আশা করছি সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’