ঢাকাশুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুরাদপুর কিভাবে মুরাদপুর হয়ে উঠলো!

Link Copied!

প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সোলতান হোসেন শাহ-এর পুত্র নসরত শাহ ত্রিপুরা আক্রমণ করে চট্টগ্রাম অধিকার করেন। চট্টগ্রামে তার আধিপত্য বিস্তার লাভ করলে তার অধীনস্থ কর্মকর্তা মুরাদকে নিজামপুর পরগণার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। মুরাদ কোন অঞ্চলে তার রাজধানী স্থাপন করেছিল জানা যায়নি। তার নামের উপর ভিত্তি করে ‘মুরাদপুর’ গ্রাম নাম দেওয়া হয় বলে ঐতিহাসিকগণ মন্তব্য করেন।

সন্দ্বীপের ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, ষোলশত শতকের পরে সন্দ্বীপের দীলেল রাজা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব বিস্তার করেন। নিজামপুর পরগণায় তার ক্ষমতার বহর ছিল। তার অনেকগুলি ছেলের মধ্যে মুরাদ ছিল বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিসম্পন্ন, মুরাদ সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে বসতি স্থাপন করেন। তার নামানুসারে ‘মুরাদপুর’ নাম হয় বলে মনে করা হয়। সন্দ্বীপের ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, আনুমানিক ১৭৪৩ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যে আবু তোরাব, মোহাম্মদ মুরাদ, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ আকবর সন্দ্বীপের জমিদারী লাভ করেন, মোহাম্মদ মুরাদ নিজামপুর পরগণায় এসে আধিপত্য বিস্তার করেন এবং বসতি স্থাপন করেন। তার নামের উপর ‘মুরাদপুর’ হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করা যেতে পারে।

ওয়াহিদুল আলমের চট্টগ্রাম ইতিহাস থেকে জানা যায়, সন্দ্বীপের জমিদার আবু তোরাব মীরসরাই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। তার জ্ঞাতি এবং সেনাধ্যক্ষ ছিলেন মুরাদ আহমদ চৌধুরী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের চক্রান্তের শিকার হন মুরাদ, মুরাদ আবু তোরাবকে হত্যা করেন। মুরাদ আহমদের আধিপত্য বিস্তৃত হয় মীরসরাই এবং সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে। তিনি নিজেই তার নামে ‘মুরাদপুর’ গ্রামের নামকরণ করেন বলে ধারণা করা যায়। অবশ্য মীরসরাই-এ ও মুরাদপুর নামে একটি গ্রামের নামকরণ করেন বলে ধারণা করা যায়।

মুরাদপুর ইউনিয়ন সীতাকুণ্ড উপজেলার আওতাধীন ৪নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম সীতাকুণ্ড মডেল থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৮১নং নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৪ এর অংশ। এটি ছোট কুমিরা, ভাটেরখীল, গোলাবাড়িয়া, গুলিয়াখালী, মুরাদপুর এবং গোপ্তাখালী এ ৬টি মৌজায় বিভক্ত। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হল:

বশরত নগর

উত্তর ভাটেরখীল

গোলাবাড়িয়া

ভাটেরখীল

গুলিয়াখালী

পশ্চিম মুরাদপুর

মুরাদপুর

দক্ষিণ মুরাদপুর

গোপ্তাখালী

হাসনাবাদ

দক্ষিণ রহমত নগর

ঢালিপাড়া

পূর্ব মুরাদপুর

দোয়াজীপাড়া

পেশকারপাড়া

মুরাদপুর ইউনিয়নে ৩১টি মসজিদ, ১০টি ঈদগাহ ও ৭টি মন্দির রয়েছে।

মুরাদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে সন্দ্বীপ চ্যানেল। এছাড়া এ ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ছোট কুমিরা খাল, গুলিয়াখালী খাল, রাজাপুর খাল, বারৈয়াখালী খাল, গোপ্তাখালী খাল এবং ছোট কুমিরা ও গুলিয়াখালী সংযোগ খাল।

মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রধান হাট/বাজার হল মুরাদপুর বাংলাবাজার।

এক সময়কার সেই সবুজ শ্যামন সুন্দর মুরাদপুর এর এখন কি অবস্থা জানেন?

বর্তমানে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মুরাদপুরে বিরাজ করছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। ভিড়, যানজট, রেলক্রসিং মিলিয়ে সেখানে ভয়াবহ হট্টগোল অবস্থায় চলছে মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্যের কারবার। রাস্তা দখল করে বিভিন্ন কারখানা চালু হওয়ায় বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। আবাসিক ও পথচারীদের জন্য সেখানে তৈরি হয়েছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাওয়ার পথগুলো মুরাদপুর দিয়ে গিয়েছে। সারা দিনই মুরাদপুর মোড় চরম ব্যস্ত থাকে যানবাহন ও মানুষের ভিড়ে। এমন একটি জনবহুল এলাকায় রয়েছে রেল ক্রসিং। রেললাইন মুরাদপুরের ব্যস্ত সড়ককে ছেদ করে চলেছে উত্তর চট্টগ্রামের নাজিরহাট ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারী স্টেশনে। দিনে অনেক বার ট্রেনের যাতায়তের সময় তৈরি হয় মারাত্মক পরিস্থিতি। রেললাইন ঘেঁষা দোকান ও অস্থায়ী বাজার বসায় যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা রয়েছে।

 

ভিড় ও যানজটে পরিপূর্ণ মুরাদপুরের রাস্তার দুই পাশে ছোট ছোট কারখানায় ভরপুর। লেড মেশিং, ওয়েল্ডিং ছাড়াও যানবাহনের ইঞ্জিন সারানো হচ্ছে প্রকাশ্য রাজপথে। পেট্রোল, মবিল ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। দাহ্য পদার্থ থেকে যেকোনো সময় আগুন লেগে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে।