বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশে গমের রপ্তানি পুনরায় শুরু করার কথা ভাবছে ভারত। এসব দেশের সরকারের পক্ষ থেকে গম রপ্তানির অনুরোধ পাওয়ার পর ভারতের সরকার এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। সোমবার ভারতের সরকারি একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির অর্থনৈতিক সংবাদপত্র লাইভ মিন্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ভারত অন্তত পাঁচটি দেশ থেকে গম রপ্তানির অনুরোধ পেয়েছে। এসব দেশ হলো— বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।
বিশ্বজুড়ে দাম বৃদ্ধির কারণে গত ১৩ মে গমের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। রপ্তানি নিষিদ্ধ করলেও দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রতিবেশি এবং অন্যান্য দেশ; যারা খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হয়েছে তাদের জন্য জন্য জিটুজি ভিত্তিতে সরবরাহ চালু রাখে।
ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লাইভ মিন্ট বলছে, নিষেধাজ্ঞার পর ইন্দোনেশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ এবং ইয়েমেনের কাছ থেকে গম সরবরাহের অনুরোধ পেয়েছে ভারত। এসব দেশের গমের চাহিদা এবং ভারতের কাছে গম কতটুকু আছে তা মূল্যায়ন করছে সরকার।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত থেকে আরও বেশি গম আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ কেবল ভারতের রপ্তানিকৃত মোট গমের প্রায় অর্ধেকই আমদানি করেনি বরং রাশিয়া ও ইউক্রেনের গমেরও ক্রেতা ছিল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে রাশিয়া থেকে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গম আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৬১০ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলারের গম।
ভারতের ডিরেক্টরেট-জেনারেল ফর কমার্শিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের (ডিজিসিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গম রপ্তানি করেছে ভারত।
আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের তুলনায় কম দামে গম বিক্রি করে ভারত। ভারতের ভোক্তা, খাদ্য ও জন বিতরণ মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম দামে ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরবরাহ বৃদ্ধির অনুরোধের পেছনে এটিও কাজ করছে।
লাইভ মিন্ট বলছে, ইউক্রেনের গমের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক ইন্দোনেশিয়া। ২০২০ সালে দেশটি ইউক্রেন থেকে ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গম আমদানি করেছে। অন্যদিকে, ২০২১-২২ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ভারত প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের গম রপ্তানি করেছে।
এছাড়া ২০২০ সালে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কাছ থেকে যথাক্রমে ১৭৪ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ও ১৪৪ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের গম আমদানি করেছে ইয়েমেন। একই সময়ে রাশিয়া থেকে ১৪৬ মিলিয়ন ডলারের গম আমদানি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে, রোববার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক ওকোনজো-ইওয়েলা এনগোজি বলেছেন, এসব দেশের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। এই ধরনের পদক্ষেপ চলমান বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।