ঢাকারবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রশ্নের ধরন বদলে যাবে, সৃজনশীলের বর্তমান কাঠামো থাকবে না

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ১১, ২০২২ ৬:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পরীক্ষার প্রশ্নের কাঠামো এখনকার মতো হুবহু থাকবে না। প্রশ্ন প্রণয়নে শিক্ষকদের স্বাধীনতা থাকবে। প্রশ্নগুলো হবে মিশ্র ধরনের।

এখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র হয় দুই ধরনের। একটি অংশে থাকে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র, যেখানে একটি প্রশ্নকে চার ভাগে ভাগ করে উত্তর জানতে চাওয়া হয়। আরেকটি অংশে থাকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ)।

 

কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও কাঠামোগত বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রশ্নপত্রের ধরনও বদলে যাবে। পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সৃজনশীল হলেও তার কাঠামো এখনকার মতো হুবহু থাকবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে একটি অংশের মূল্যায়ন হবে সারা বছরের ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। আরেকটি অংশের মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। এতে প্রশ্নের ধরন নির্ভর করবে বিষয়ের প্রকৃতি, যোগ্যতা অর্জনের চাহিদা এবং অভিজ্ঞতার ধরনের ওপর। প্রশ্নগুলো হবে সমস্যা সমাধানভিত্তিক। দুই ক্ষেত্রেই প্রশ্ন প্রণয়নে শিক্ষকদের স্বাধীনতা থাকবে। অর্থাৎ উত্তর জানার প্রশ্নগুলো মিশ্র ধরনের।

 

দেশের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয় গত ৩০ মে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশ্নপত্রের ধরন কেমন হবে, এখন তা নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে এখনো খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক রূপরেখা মাথায় নিয়ে কাজটি হচ্ছে।

যতটুকু জানা গেল, তাতে কেবল প্রশ্নপত্র প্রণয়নে শিক্ষকদের ঢালাও স্বাধীনতা দিলেই হবে না, প্রশ্নপত্র হতে হবে শিক্ষাক্রমে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে। না হয় এর যথার্থতা নষ্ট হতে পারে। তাই আরও ভেবেচিন্তে এবং বিচার–বিশ্লেষণ করে প্রশ্নপত্রের ধরন ঠিক করে দিতে হবে।

এস এম হাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পুরো শিখন শেখানো ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি হবে সৃজনশীল।

 

তবে যেহেতু আগের মতো মুখস্থ ও তথ্যভিত্তিক পরীক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কাজেই এখানে (নতুন শিক্ষাক্রম) মূল্যায়নের ধরন হবে একেবারে ভিন্ন। শিখনকালীন মূল্যায়নে যেমন শিক্ষার্থীকে তার শিখনের বিভিন্ন পর্যায়ে পারদর্শিতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে, তেমনি সামষ্টিক মূল্যায়ন (পরীক্ষা) প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা পুরোপুরি উঠে না গেলেও লিখিত পরীক্ষায় প্রচলিত ব্যবস্থায় যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, সেভাবে হবে না। এ নিয়ে কাজ চলছে।

 

এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) বাস্তবায়ন শেষে আগামী বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এতে প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা থাকবে না; শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার ওপর।

 

আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং ৪০ শতাংশ হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে।

নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন; বাকি মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। ওই সব শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ে পুরো মূল্যায়নই হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হবে। এই স্তরে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বাকি ৩০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন।

শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন শিক্ষক বলেন পরীক্ষার ভিত্তিতে করা মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ারও সুযোগ থাকছে। এখন মূলত শিক্ষার্থীরা তার পঠিত তথ্য কতখানি মনে রাখতে পারে এবং কত নির্ভুলভাবে তা লিখে উপস্থাপন করতে পারে, তার ওপরেই নম্বর দেওয়া হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে তার তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং তথ্য ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের দক্ষতার ওপর।

 

নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষা থাকছে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।