ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিজেদের গোলাবারুদ প্রায় শেষ, পশ্চিমের সহায়তাই এখন ভরসা ইউক্রেনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ১১, ২০২২ ৪:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে নিজেদের গোলাবারুদের মজুত তলানিতে নেমে এসেছে ইউক্রেনের। কেবল পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা এখন যুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে পারে দেশটিকে।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়ান্দা সংস্থার উপ প্রধান ভাদিম স্কিবিৎস্কি যুক্তরাজ্যের দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘এখন এটি স্পষ্টতই গোলাবারুদের যুদ্ধ এবং খোলাখুলিভাবেই বলছি, আমরা এখন সত্যিকারভাবে বিপদের মধ্যে আছি, কারণ আমাদের গুলি ও গোলাবারুদ প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে।’

 

ভাদিম স্কিবিৎস্কি জানান, রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার রাউন্ড গোলা ছুড়তে হচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনাদের। গত তিন মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার রাউন্ড গোলা ছুড়তে থাকায় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর নিজেদের গোলাবরুদের মজুত ফুরিয়ে এসেছে উল্লেখ করে গার্ডিয়ানকে স্কিবিৎস্কি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের গোলার মজুত প্রায় শেষ, এখন আমরা ১৫৫ ক্যালিবার ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড শেল ব্যবহার করছি।’

‘কিন্তু এই শেলের মজুতও বেশি নেই। খুব হিসেবে করে আমাদের গোলা ছুড়তে হচ্ছে এবং রাশিয়া যদি ১৫টি গোলা ছোড়ে, সেক্ষেত্রে আমরা একটা গোলা ছুড়ছি।’

‘দনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বাজে অবস্থা চলছে আমাদের। বলতে গেলে, সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা প্রায় অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধ করছে।’

‘পশ্চিমা মিত্ররা তাদের অস্ত্রভাণ্ডারের প্রায় ১০ শতাংশ আমাদের দান করেছে, কিন্তু আমাদের আরও অস্ত্র প্রয়োজন, বিশেষ করে দূরপাল্লার রকেট ও গোলা। এই যুদ্ধে আমরা টিকে থাকতে পারব কি না— এখন তা নির্ভর করছে আমাদের পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তার ওপর।’

তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট ব্যতীত রুশ বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলার অন্য কোনো পথ নেই।

 

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।

 

বুধবার ১০৭তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। ইতোমধ্যে দেশটির দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম এবং মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্কের সেভারদনেতস্ক শহরে ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে তীব্র সংঘাত চলছে রুশ বাহিনীর।

 

যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় থেকেই দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দেন দরবার চালিয়ে আসছিল ইউক্রেন, কিন্তু এই অস্ত্র পাঠালে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘাত হতে পারে— এই আশঙ্কায় প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনে এই অস্ত্র পাঠাতে রাজি হচ্ছিল না।

 

শেষে গত ২ জুন এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনের দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হবে না— ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র রকেট সিস্টেম পাঠাতে সম্মত হয়েছে বলে জানান বাইডেন।

 

তবে বাইডেন এই ঘোষনা দেওয়ার একদিন পরই পাল্টা সতর্কবার্তা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে রকেট সিস্টেম সরবরাহ করে, তাহলে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের যেসব স্থাপনায় হামলা চালানো থেকে বিরত থেকেছে রুশ বাহিনী, সেগুলোতে হামলা শুরু হবে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটির সামরিক বাহিনীর ৩ হাজার ৪৪৩টি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান, ১ হাজার ৮০৭টি ফিল্ড আর্টিলারি ও মর্টার, ১ হাজার ১৩৯টি ড্রোন, ৪৭৮টি মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার, ১৯০টি যুদ্ধবিমান ও ১২৯টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে রুশ সেনারা।