ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিএম ডিপোতে হতাহতের স্বজনদের অজানা ভবিষ্যতের শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ৯, ২০২২ ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমার বড় মেয়ে সামিয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আর ছেলে রোহনের বয়স মাত্র দুই বছর। মাসুদ রানার আয়ে চলতো সংসার। এখন সে নেই। কে আমাদের দেখবে। আমার মেয়েকে কে পড়াবে, সামনের দিনগুলো চলব কীভাবে। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ স্বামী মাসুদ রানার মৃত্যুর পর এভাবেই অজানা ভবিষ্যতের কথা বলছিলেন তার স্ত্রী সুমি আক্তার। 

গত শনিবার (৪ জুন) বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মাসুদ রানা ভর্তি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার (৮ জুন) ভোরে মারা যান মাসুদ রানা। এদিন দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্বামীর লাশের অপেক্ষা করছিলেন সুমি আক্তার।

এসময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুন লাগার পর ভিডিওকলে আমার সঙ্গে মাসুদের কথা হয়েছিল। তখন তাকে আমি বের হয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সে শোনেনি। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি  অবস্থায় পাই। এরপর তিন দিন চিকিৎসাধীন থেকে আমাদেরকে রেখে চলে গেল।

এর কিছুক্ষণ পরে সুমি বলেন, এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কী করব? সন্তানরা একটু পরপর তাকে খুঁজছে। সারাদিন তার জন্য কেঁদেছি, আল্লাহর কাছে চেয়েছি। সে ফিরে এল না।

মাসুদ রানা জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানার গোপীনাথপুর এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ সবার বড়। ১২ বছর আগে মাসুদ ও সুমি বেগমের বিয়ে হয়। তিনি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আরএসটি অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় দুর্ঘটনায় আহত পরিবারের সদস্যরাও। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তারাও রয়েছেন চিন্তায়। 

বিএম ডিপোতে নোয়াখালীর জাহাঙ্গীর আলম কাজ করতেন। ঘটনায় দিন অগ্নিকাণ্ডে তার হাত, কোমর পুড়ে গেছে। সমস্যা হয়েছে চোখেও। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে। হাসপাতালে কথা হয় তার স্ত্রী নুরনাহার বেগমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী বিএম ডিপোতে লোড আনলোডের কাজ করত। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। ওষুধও ফ্রি পাচ্ছি। তবে বিএম ডিপো মালিকপক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, আমাদের দুই ছেলে দুই মেয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী। সে এখন হাসপাতালে ভর্তি। চোখেও সমস্যা হয়েছে তার। কখন সুস্থ হবে সে? কারণ তার আয়ে আমাদের সংসার চলে। বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে হবে। সে ইনকাম করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের।

মহিউদ্দিন নামের একজন বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি চোখে দেখতে পারছেন না বলে অভিযোগ ছেলে মোহাম্মদ রাজীবের। হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি মহিউদ্দিন। তার ছেলের অভিযোগ এখনও মালিকপক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না তাদের। তবে সরকারি কিছু সহযোগিতা ছিল

মোহাম্মদ রাজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। বাবাই পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় আমিও বাবার সঙ্গে এখানে আছি। সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে কে জানে।

এদিকে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আগামী ১২ ও ১৩ জুন বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ ঘোষিত এবং প্রশাসন নির্ধারিতদের আর্থিক সহায়তা হতাহতদের পরিবারকে দেওয়া হবে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ১০ লাখ টাকা, অঙ্গহানির শিকার প্রত্যেককে ৬ লাখ টাকা এবং অপরাপর আহতদের ৪ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের নিহতদের পরিবারকে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও আহতদের ৭ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।

বিএম ডিপোর মূল প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের প্ল্যানিং ম্যানেজার বাবলু কুমার দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি সবাইকেই আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করবে মালিকপক্ষ। না হয় বেতন দিয়ে দেবে, যতদিন তারা সুস্থ না হবেন। অথবা হতাহতের পরিবারের কেউ চাকরির উপযুক্ত থাকলে তাকে চাকরি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আহত যারা টাকা পায়নি বলছে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে টাকা দেওয়া হয়েছে। কেউ না পেলে যোগাযোগ করলে মালিকপক্ষ সহযোগিতা করবে। এই পর্যন্ত ১৪৮ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২৭ জনকে শনাক্ত করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।